ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

প্রশাসক নেই দুই ইউনিয়নে, সেবা না পেয়ে ভোগান্তিতে হাজারো মানুষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাজবাড়ী 

প্রকাশিত: ১৪:১৪, ২৮ জুলাই ২০২৫

প্রশাসক নেই দুই ইউনিয়নে, সেবা না পেয়ে ভোগান্তিতে হাজারো মানুষ

ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ

তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের সেবা নিশ্চিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)। কিন্তু রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদে দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসক না থাকায় থমকে গেছে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম। ফলে দুই ইউনিয়নের হাজারো মানুষ জরুরি সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, পড়ছেন চরম দুর্ভোগে।

জানা গেছে, মেয়াদ শেষ হওয়ায় দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা দায়িত্বচ্যুত হন। এরপর গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ৪ জুলাই পর্যন্ত গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খেকন উজ জামান দৌলতদিয়া ইউনিয়নে এবং উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমীন দেবগ্রাম ইউনিয়নে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একইসঙ্গে ইউপির ওয়ার্ডভিত্তিক সদস্য হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের। এতে সীমিত আকারে হলেও সেবা চলমান ছিল।

তবে গত ৩০ জুন কৃষি কর্মকর্তার বদলির পর দৌলতদিয়া ইউনিয়নে আর কোনো প্রশাসক নিযুক্ত করা হয়নি। একইসঙ্গে ৪ জুলাই মেয়াদ শেষ হওয়ায় দেবগ্রাম ইউনিয়নের প্রশাসকও দায়িত্বে নেই। দুই ইউনিয়নেই এখন কার্যত প্রশাসনিক শূন্যতা বিরাজ করছে। এতে করে জন্ম-মৃত্যু সনদ, ওয়ারিশ সনদ, বানিজ্যিক সনদ, চারিত্রিক সনদসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সরকারি সেবা পেতে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

সোমবার  (২৮ জুলাই) সকালে সরেজমিনে দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত সেবা প্রত্যাশীদের ভিড়। কিন্তু দায়িত্বশীল কেউ না থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন তারা। কার্যালয় সচল রাখতে দেখা যায় মাত্র দুইজন গ্রাম পুলিশকে। একই দৃশ্য দেখা গেছে দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদেও। জানা যায়, দু’জন প্রশাসনিক কর্মকর্তাই বর্তমানে ঢাকায় প্রশিক্ষণে রয়েছেন।
দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ দিনে ১৬০ জন নাগরিক সনদের জন্য, ১০ জন বানিজ্যিক সনদের জন্য, ১৭ জন ওয়ারিশ সনদের জন্য এবং ১০০ জন জন্ম-মৃত্যু সনদের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু বর্তমানে প্রশাসক না থাকায় নতুন কোনো আবেদনই গ্রহণ করা হচ্ছে না।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রশাসক না থাকায় কোনো কাগজপত্র সম্পাদন করা যাচ্ছে না। ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. মাইনদ্দিন পাল বলেন, “জমি নামজারির জন্য দ্বৈত প্রত্যয়নপত্র দরকার। কয়েকদিন ধরে ঘুরেও কোনো সুরাহা পাচ্ছি না।”

পূর্বপাড়া গ্রামের মোছা. শিরিন আক্তার জানান, “মেয়ের জন্মসনদে ভুল রয়েছে। সংশোধনের জন্য বারবার ইউনিয়ন অফিসে এসেও কাজ হচ্ছে না।” সজীব হোসেন নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, “মায়ের মৃত্যু সনদের জন্য ছয়দিন ধরে অফিসে আসছি। এখনও কিছুই হয়নি।”
ব্র্যাক ব্যাংকের গোয়ালন্দ শাখার রিলেশনশিপ কর্মকর্তা মো. আরাফাত হোসেন বলেন, “বানিজ্যিক ও ওয়ারিশ সনদ না পেয়ে আমাদের বহু গ্রাহক বিপাকে পড়েছেন।”

তবে দেবগ্রাম ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মামুনুর রশিদ জানিয়েছেন, পূর্বে নিয়োগকৃত প্রশাসক এখনো কিছু জরুরি কাজ করে যাচ্ছেন, তাই বড় ধরণের জটিলতা হচ্ছে না।

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমান বলেন, “৪ জুলাই নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসকদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। দৌলতদিয়ার প্রশাসক বদলির কারণে আগেই চলে গেছেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে নতুন প্রশাসক নিয়োগের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই নিয়োগ সম্পন্ন হবে।”
 

নোভা

×