
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর সোমবার সংসদে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আনতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো ভূমিকা ছিল না—না তিনি বাণিজ্য বন্ধের হুমকি দিয়েছেন, না পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কথা বলেছেন।
“২২ এপ্রিল (পেহেলগাম হামলা) থেকে ১৭ জুন (যুদ্ধবিরতির দিন) পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যে কোনো ফোনালাপ হয়নি… এবং কোনো পর্যায়েই বাণিজ্য ও চলমান ঘটনার মধ্যে কোনো সংযোগ ছিল না,” বলেন জয়শঙ্কর, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সংসদে এক উত্তপ্ত আলোচনার সময়।
এর আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদকে সংঘর্ষ থামাতে রাজি করিয়েছেন—যা পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কংগ্রেস নেতা গৌরব গগৈ সংসদে বলেন, ট্রাম্প ২৬ বার বলেছেন, তিনি বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করেছেন।
ভারত একাধিকবার ট্রাম্পের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং জম্মু-কাশ্মীরে পাকিস্তানের অবৈধ দখল প্রসঙ্গে তার 'মধ্যস্থতা'র প্রস্তাবও নাকচ করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদিও জুনের মাঝামাঝি এক ফোনালাপে ট্রাম্পকে এই বার্তা সরাসরি দিয়েছেন।
ভারত ট্রাম্পের বাণিজ্য ও যুদ্ধবিরতিকে একসূত্রে বাঁধার প্রচেষ্টাকেও দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এর আগে ট্রাম্প একাধিকবার আত্মপ্রশংসা করে বলেছিলেন, “আমি মোদি এবং পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের বলেছিলাম, ভাইসব, পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে খেলাধুলা নয়—তোমরা যেসব চমৎকার জিনিস তৈরি করো, সেগুলোর বাণিজ্য করো।”
তিনি আরও দাবি করেন, “আমি নিশ্চিতভাবেই ভারত-পাক সমস্যা মেটাতে সাহায্য করেছি।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর সোমবারের বক্তব্যে আবারও ১ জুলাইয়ের মন্তব্য পুনরুল্লেখ করেন, যেখানে তিনি বলেছিলেন, সেদিন তিনি মোদির সঙ্গেই ছিলেন, যখন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ফোন করেন। সেই ফোনালাপেও বাণিজ্য ও যুদ্ধবিরতির মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল না, বলেন জয়শঙ্কর।
১ জুলাই, জয়শঙ্কর এক মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে জানান, মে মাসের ৯ তারিখ রাতে মোদি ভ্যান্সকে ফোন করে বলেন, পাকিস্তানের পক্ষ থেকে “ভারতের উপর এক বিশাল হামলার” প্রস্তুতি চলছে।
এরপরের যোগাযোগ আসে ঠিক তখনই, যখন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতকে ফোন করে শান্তি চায়।
জয়শঙ্কর বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও তাকে বলেন, “পাকিস্তানিরা শান্তি আলোচনায় প্রস্তুত।” তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তানের ডিরেক্টর-জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
এই বক্তব্য আসলে বিরোধীদের, বিশেষ করে কংগ্রেসের ধারাবাহিক অভিযোগের জবাব, যারা বলেছে ভারতের কূটনৈতিক ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বিদেশি শক্তির কথায় ভারতের পররাষ্ট্রনীতি পরিচালিত হচ্ছে।
আবির