
সম্পাদকীয়
সম্প্রতি দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি দৃশ্যমান। বৃহস্পতিবার রাতে (২৪ জুলাই) রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েও পুলিশের কাছে গিয়ে সমাধান না পেয়ে উল্টো হয়রানির শিকার হয়েছেন এক যুবক। তার অভিযোগ, রাস্তায় ছিনতাইকারীদের দেখিয়ে দিলেও পুলিশ তাদের আটক না করে নির্বিকার ছিল। পেশায় সাংবাদিক ওই যুবক বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর দেশজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
এরপর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফোনসহ ৩ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানার চার পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরিতাপের বিষয়, চুরি-ডাকাতি, খুনসহ এমন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঢাকাসহ সারাদেশে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে। বিভিন্ন এলাকায় প্রধান সড়ক থেকে অলিগলি বেপরোয়া ছিনতাইচক্র। রাত-দিন নির্বিশেষে ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
দিনদুপুরে যাত্রীবাহী বাসে, মহল্লার গলিতে প্রকাশ্যে ছিনতাই এবং রাতে দূরপাল্লার বাসে সর্বস্ব লুটের মতো ঘটনা ঘটছে। অনেক ক্ষেত্রে দুর্বৃত্তরা ছিনতাই করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না, শারীরিকভাবে মানুষের গুরুতর ক্ষতিও করছে। এতে জনজীবনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
যে কোনো স্থিতিশীল সমাজের অন্যতম শর্ত জননিরাপত্তা। ৫ আগস্টের পর দেশে অপরাধ বৃদ্ধির প্রবণতা অনেকটাই অপ্রত্যাশিত। কাজেই রাজধানীসহ দেশের যেসব জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে, সেসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল বাড়ানো আবশ্যক। প্রয়োজনে পুলিশ, বিজিবি ও সামরিক বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ টহলের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ঝুঁকিপূর্ণ স্পটগুলোতে ২৪ ঘণ্টা চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটর করা প্রয়োজন।
সব বাহিনীর ইন্টেলিজেন্স উইং, ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সমন্বয় সাধন করে অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলোকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতা করা উচিত। অপরাধী ধরা পড়লে তাকে ছাড়াতে ছাড়াতে রাজনৈতিক নেতাদের তদবির কাম্য নয়। ব্যবসায়ীদের নগদ টাকা পরিবহনে নিরাপত্তার স্বার্থে সান্ধ্যকালীন পুলিশি টহল বাড়ানো যেতে পারে। সর্বোপরি দেশে সাধারণ মানুষ কিংবা কোনো রাজনৈতিক কর্মী কেউ যেন আর দুর্বৃত্তদের নিশানায় পরিণত না হন। অপরাধী যেই হোক না কেন, আইনের আওতায় এনে তার দ্রুত বিচার করা চাই।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের মানুষ সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যা অবস্থা তা কিছুটা হতাশাজনক বলা যায়। এভাবে চলতে থাকলে ক্রমেই সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা তৈরির সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও জনগণের নিরাপত্তায় অন্তর্বর্তী সরকার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেÑ এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
প্যানেল হু