
সম্পাদকীয়
আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষের যুগে শুধু পুঁথিগত বিদ্যায় সফলতা অর্জন করা বেশ কঠিন। এই বাস্তবতায় বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কর্মমুখী শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে। নিঃসন্দেহে এটি সময়োপযোগী, ইতিবাচক পরিবর্তন, যা দেশের উচ্চশিক্ষা খাত এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। কর্মমুখী শিক্ষা তরুণদের আত্মনির্ভরশীল করে তোলে। দেশের ১১৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১০৪টিতেই প্রকৌশল বিষয় পড়ানো হয়।
বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল বিষয়ে শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), এজেন্টিক এআই, রোবটিকস, ডাটা সেন্টার ম্যানেজমেন্ট, সাইবার সিকিউরিটি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে বিশেষ কোর্স চালু করেছে। এটি আশা জাগানিয়া সংবাদ।
প্রায় সাড়ে তিন দশকে ১৫ থেকে ২০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাদানে ভালো করছে। গত কয়েক বছরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন চালু করা ব্যাচেলর অব রিয়েল এস্টেট, এন্টারপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট, নার্সিং অ্যান্ড হেলথ সায়েন্স, ফার্মাসি, বিজনেস অ্যানালাইটিক্স, ফিনটেক্স (ফিন্যান্স অ্যান্ড টেকনোলজি) এবং ইন্স্যুরেন্স অ্যান্ড রিচ ম্যানেজমেন্টের মতো বিষয়গুলো নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে শেখানো হচ্ছে। শুধু থিওরিটিক্যাল জ্ঞান নয়, শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ, প্রকল্পভিত্তিক কাজ এবং বাস্তব সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়ে দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। কর্মসংস্থানমুখী জ্ঞান অর্জনের কারণে এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন উচ্চ বেতনে। এমনকি বিদেশেও তারা ভালো করছেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার ইউএপির সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে যুগোপযোগী পাঠ্যক্রম, পাঠদান ও যথাযথ মূল্যায়ন গুরুত্বপূর্ণ।
আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় উন্নত বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে তথ্যপ্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই।’ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা গ্র্যাজুয়েটরা নাসা, গুগল, মাইক্রোসফট, বিশ্বব্যাংক ইত্যাদি সংস্থায় চাকরি করছে। এই গ্র্যাজুয়েটদের অনেকে সফল কোম্পানির উদ্যোক্তা হয়েছেন।
দেশে প্রতি বছর সব মিলিয়ে ২৪ লাখ তরুণ-তরুণী চাকরির বাজারে প্রবেশ করছেন। ৫-১০ লাখ দেশের বাইরে যান, যাঁদের অধিকাংশই অদক্ষ। কর্মমুখী শিক্ষা থাকলে বিদেশে কাজের সুযোগ পাওয়া যায় সহজেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, এক দশক ধরেই দেশে বেকারের সংখ্যা ২৫-২৭ লাখের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আরও দুঃখজনক বিষয় হলো এর মধ্যে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যাই বেশি। দেশের ক্রমবর্ধমান বেকারত্বের হার কমাতে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিল্প খাতের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কারিকুলাম সাজাতে হবে।
দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ এবং প্রয়োজনীয় ল্যাব সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্টনারশিপ বাড়াতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে বাস্তব অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারেন। সরকারকেও এই পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে হবে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কর্মমুখী শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রণোদনা ও নজরদারির ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি। বাংলাদেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ তরুণ। তাদের কর্মমুখী শিক্ষায় দক্ষ করে তুললে দেশের ভবিষ্যৎ ও অর্থনীতি হবে মজবুত।
প্যানেল হু