ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

 কুর্মিটোলা শাহীন কলেজ, আকাশপ্রহরার গর্বে গড়া এক সবুজ পাঠশালা

এবিএম নাওশাদিজ্জামান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বিএএফ শাহীন কলেজ, কুর্মিটোলা

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ২৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১১:৫৬, ২৮ জুলাই ২০২৫

 কুর্মিটোলা শাহীন কলেজ, আকাশপ্রহরার গর্বে গড়া এক সবুজ পাঠশালা

বিএএফ শাহীন কলেজ

ঢাকার কোলাহল থেকে আলাদা এক শান্তিময় জগত — ঢাকা সেনানিবাস,যেখানে সকাল নামে প্যারেডের ছন্দে, আর সন্ধ্যা নামে নিঃশব্দ প্রতিরক্ষার প্রতীক্ষায়। এই সুবিন্যস্ত, ছায়াঘেরা, শৃঙ্খলাপূর্ণ এলাকায় বিস্তৃত রয়েছে সবুজ গাছপালা, উঁচু উঁচু তালগাছ, পরিচ্ছন্ন সড়ক, পাখির কিচিরমিচির আর সুবাতাসে মোড়া নিরব প্রকৃতি।

ঠিক এই অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝখানে,আকাশের নীচে গড়ে উঠেছে এক অনন্য বিদ্যাপীঠ—বিএএফ শাহীন কলেজ কুর্মিটোলা।

এটি কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি যেন আকাশ ও মাটির মাঝে স্থাপিত এক আদর্শের ঘাঁটি, যার গায়ে লেগে আছে গর্ব, ইতিহাস, শোক ও স্বপ্নের রঙ।এই কলেজ অবস্থিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধু (এ.কে. খন্দকার)-এর অভ্যন্তরে—এবং এতটাই সন্নিকটে রানওয়ের যে, যেন শ্রেণিকক্ষের জানালা দিয়েই দেখা যায় আকাশ ছোঁয়ার প্রস্তুতি।

প্রতিদিন মাথার ওপর দিয়ে গর্জে ওঠে যুদ্ধবিমান। তার প্রতিটি শব্দে কেঁপে ওঠে কাঁচ, জেগে ওঠে এক রোমাঞ্চ। তুমি যদি এই কলেজে পড়ো, তবে তোমার প্রতিটি ক্লাসে থাকবে আকাশরক্ষার ছায়া, প্রতিটি পরীক্ষায় থাকবে সাহসের অনুপ্রেরণা।

শান্ত বিকেলে, যখন খেলার মাঠে ছেলেমেয়েরা দৌড়ায়, তখন দূর আকাশে চক্কর কাটে একটি যুদ্ধবিমান।তাদের পেছনে পতাকার মত ভেসে ওঠে মেঘের সারি।দুইটি বিশাল মাঠ, শত শত ছাত্রছাত্রী, আর চারদিকে ছড়িয়ে থাকা গাছ-গাছালি সব মিলে কুর্মিটোলা শাহীন কলেজ যেন এক সাহসিকতার বাগান।

এই প্রতিষ্ঠানে সময় চলে নিয়মমাফিক— যেন ঘড়ির কাঁটার। সঙ্গেও প্যারেড হয় এখানে। প্রতিটি দিন শুরু হয় পতাকা উত্তোলনে, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা কেবল গান গায় না,তারা প্রতিজ্ঞা করে— এই আকাশ, এই ভূমি, এই পতাকা রক্ষাই একদিন তাদের হাতের দায়িত্ব হবে।

তবে গৌরবের এই যাত্রায় ছিল এক বিষাদের অধ্যায়ও—২০২৫ সালের মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি যেন সবুজ এই প্রাঙ্গণে নেমে এসেছিল হঠাৎ এক কালো ছায়া। কিছু প্রাণের চিরবিদায়, কিছু স্বপ্নের অপূর্ণতা আজও গেঁথে আছে কলেজের প্রতিটি দেয়ালে।কিন্তু শোক মানুষকে ভেঙে দেয় না সবসময়।কখনো কখনো শোক গড়েও তোলে এক দৃঢ় প্রজন্ম, যারা আরেকটু বেশি দেশপ্রেমিক, আরেকটু বেশি দায়িত্ববান।

আজকের কুর্মিটোলা শাহীন তাই কেবল শিক্ষায় নয়,আচরণে, শৃঙ্খলায় ও মননে হয়ে উঠেছে দেশের ভবিষ্যতের আকাশপ্রহরী প্রস্তুতকারী কারখানা।

বিমান বাহিনী ঘাঁটির বুকের ওপর দাঁড়িয়ে, আর রানওয়ের গর্জনের পাশে বেড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের হৃদয়ে ঢেলে দেয় সাহস, সততা ও সেবার বীজ।
এখানে যারা একদিন স্কুলের মাঠে দৌড়ায়, তারা ভবিষ্যতে হয়তোই কোনো যুদ্ধবিমানের ককপিটে বসে দেশের সীমান্ত পাহারা দেবে।

এটাই কুর্মিটোলা শাহীন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সামরিক শৃঙ্খলা ও দেশপ্রেমের মহৎ মিলনস্থল, যেখান থেকে প্রতিদিন জন্ম নেয় একেকটি নতুন স্বপ্ন,যেগুলো একদিন আকাশ ছোঁবে, কিন্তু মাটি ভুলবে না।

তাসমিম

×