
বৃষ্টির ছায়ায় বিরাম এক রিকশাচালকের নীরব প্রতিচ্ছবি
সকালের আলো যেন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে পুরো শহর জুড়ে। রাস্তার ফাঁকে ফাঁকে জমে থাকা পানি, ছাতা হাতে ছুটতে থাকা মানুষ, দোকানের শাটার খুলছে - সব কিছু মিলিয়ে যেন এক জীবন্ত নগরের প্রতিচ্ছবি।
ঠিক এমন একটি সকালে, ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়ে এক আবেগঘন মুহূর্ত। একজন রিকশাচালক নিজের বাহনের হ্যান্ডেলে মাথা হেলিয়ে বসে আছেন। চারপাশে বৃষ্টির ঝরাপাত, পেছনের প্যাডেলচালিত রিকশার ছাউনিতে জমে থাকা জলের রেখা আর তার গায়ে ভেজা জামা - সব মিলিয়ে দৃশ্যটি যেন বাস্তবতা ও কল্পনার সীমারেখায় দাঁড়িয়ে থাকা এক শিল্পকর্ম।
ছবিটির পেছনে থাকা বাস্তবতা আরও কঠিন। দিনের পর দিন, ঋতুর পর ঋতু, এই মানুষগুলো আমাদের শহরকে চালায়। তারা পায় না ছুটি, বিশ্রাম কিংবা নিরাপত্তা। সকাল থেকে রাত, অনেক সময় না খেয়ে কিংবা ভিজে গা নিয়ে তারা রাস্তায় নেমে পড়ে। কারণ ঘরে থাকা স্ত্রী-সন্তানদের মুখে একবেলা ভাত তুলে দেওয়াটাই তাদের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।
এই মানুষটি হয়তো একটি যাত্রার অপেক্ষায় ছিলেন, হয়তোবা কারও জন্য অপেক্ষা নয়—শুধুই একটু দম নেওয়া। শুধু নিজের জন্য একটা মুহূর্তের বিরাম। এই বিরতিটাই হয়তো ছিল তার দিনভর যুদ্ধের মাঝে একটা নীরব যুদ্ধবিরতি। জীবন এখানে থেমে নেই, কিন্তু থেমে আছে যত্ন।
আমরা যারা ছাতা মাথায় ছুটে যাই অফিসে, ক্লাসে কিংবা কফিশপে—আমরা অনেক সময় ভুলে যাই আমাদের শহরটা দাঁড়িয়ে আছে এমন নামহীন, অচেনা মানুষের শ্রমের ওপর। এই ছবিটি সেই নামহীন এক যোদ্ধার প্রতিনিধিত্ব করে।
তাসমিম