ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

চুনারুঘাট: সবুজের বুকে লুকিয়ে এক অনাবিল প্রাকৃতিক খনি

এবিএম নাওশাদুজ্জামান

প্রকাশিত: ১২:০৭, ২৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১২:১০, ২৮ জুলাই ২০২৫

চুনারুঘাট: সবুজের বুকে লুকিয়ে এক অনাবিল প্রাকৃতিক খনি

ছবি: জনকণ্ঠ

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের হারানো এক রত্ন, চুনারুঘাট—প্রকৃতির মোহে মোড়া এক গ্রামীণ জনপদ। এখানে প্রকৃতির কোলে গড়ে উঠেছে এক বিরাট সবুজ বাগান, গাঢ় বনভূমি, ঝরনা-তরু আর জলজ ফুলের বিল। প্রতিদিনই বেড়ে চলছে পর্যটকের ভিড়, কারণ চুনারুঘাট এখন গড়ে উঠছে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য।

সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্যগুলোর মধ্যে রয়েছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। এ বনভূমি বিশাল বিস্তীর্ণ সবুজ ছায়া প্রদান করে, যেখানে হাজারো প্রজাতির গাছপালা আর বন্যপ্রাণী বাস করে। পাখির কিচিরমিচিরে ভরে উঠে চারপাশ, আর ঠাণ্ডা হাওয়ায় গাছের পাতা নড়ে উঠে সঙ্গীত করে। সাটছড়ির পথে হাঁটতে গিয়ে অনুভব করা যায় প্রকৃতির নিস্তব্ধতা ও শান্তি।

এছাড়া আছে রেমা–কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য — দেশের অন্যতম প্রাচীন ও বৃহৎ বনাঞ্চল। এখানে দেখা মেলে মায়া হরিণ, বানর, গুঁইসাপসহ অসংখ্য বন্যপ্রাণী। ঘন অরণ্য, পাহাড়ি ঢাল, আর গাঢ় সবুজ গাছপালার মাঝে এটি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অপূর্ব আশ্রয়স্থল।

চুনারুঘাটের প্রাণস্পন্দন হলো এর বিস্তীর্ণ চা-বাগান। এখানে ছড়িয়ে আছে অনেক কিলোমিটার সবুজ চা-গাছের সারি, যা দূর থেকে ঢেউ খেলানো সমতল ভূমির মতো মনে হয়। সকালে কুয়াশা ঢেকে রাখে বাগান, আর সন্ধ্যায় সূর্যের আলোয় সোনালি বর্ণ ধারণ করে এই সবুজ সমুদ্র। বাগানের মাঝখানে অবস্থিত দেওন্দি শাপলার বিল, যেখানে বর্ষা ও শীতকালে লাল শাপলার সমারোহ হয়। জলাশয়ের গায়ে ফুটে থাকা শাপলার ফুলগুলো যেন প্রকৃতির হৃদয়ের কথা বলে।

এখানে পাওয়া যায় ছায়াযুক্ত পাহাড়ি গ্রাম, যেখানে টিপরা আদিবাসীদের জীবনধারা ও সংস্কৃতি বিরাজমান। তাদের ঐতিহ্য, সঙ্গীত আর নৃত্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। পাহাড়ের ঢালে ছোট ছোট ঝরনাগুলো ধ্বনি নিয়ে বয়ে চলে, যা এই এলাকার শান্ত পরিবেশকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তোলে।

চুনারুঘাটের এই সবুজ এবং জীববৈচিত্র্যময় প্রকৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে পর্যটন এখন দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, এখানে পরিবেশ রক্ষা ও অবকাঠামো উন্নয়নে আরও নজর দেয়া প্রয়োজন। যদি সচেতন পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তাহলে চুনারুঘাট হতে পারে দেশের অন্যতম টেকসই পর্যটন কেন্দ্র।

পর্যটন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সাতছড়ির বন, রেমা-কালেঙ্গার অভয়ারণ্য, চা-বাগান আর শাপলার বিল একসঙ্গে মিলে চুনারুঘাটকে ইকো-ট্যুরিজমের জন্য আদর্শ স্থান করে তুলেছে। পাশাপাশি এখানে নৃতাত্ত্বিক পর্যটন, প্রকৃতি-ভিত্তিক গবেষণা ও বিনোদনমূলক ভ্রমণেরও সম্ভাবনা রয়েছে।

চুনারুঘাটের সবুজ জঙ্গল আর শান্ত জলাশয় এখন শুধু প্রকৃতির ভালোবাসার জায়গা নয়, দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার বাতিঘর।

লেখকঃ এবিএম নাওশাদুজ্জামান,ক্যাম্পাস কন্ট্রিবিউটর,বিএএফ শাহীন কলেজ, কুর্মিটোলা

সাব্বির

×