ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২

হাওর পাড়ের নতুন সম্ভাবনা “দিরাই মিনি কক্সবাজার”

মোঃ আয়মান মিয়া, দিরাই, সুনামগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৮:৫৬, ২৮ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৮:৫৬, ২৮ জুলাই ২০২৫

হাওর পাড়ের নতুন সম্ভাবনা “দিরাই মিনি কক্সবাজার”

বর্ষাকালে প্রায় ৬ মাস এটি পানির নিচে তলিয়ে থাকে

সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলা। সাধারণত একে আমরা হাওর-বাওরের জনপদ বলেই জানি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই জনপদ এক ভিন্ন রূপে ধরা দিচ্ছে স্থানীয়দের চোখে। দিরাই থেকে ধল বাজার পর্যন্ত বিস্তৃত রাস্তা, যা হাওরের বুক চিরে চলে গেছে, বর্ষা মৌসুমে রূপ নেয় এক অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কেন্দ্রে। পানি ও প্রকৃতির অপার মেলবন্ধনে সৃষ্টি হচ্ছে এক নতুন গন্তব্য, যা স্থানীয়দের কাছে পরিচিত হয়ে উঠছে “দিরাইয়ের মিনি কক্সবাজার” নামে।

এই রাস্তাটির বিশেষত্ব হচ্ছে, বর্ষাকালে প্রায় ৬ মাস এটি পানির নিচে তলিয়ে থাকে। তখন দিরাই থেকে ধল যাওয়ার একমাত্র উপায় হয় নৌকা। আর এই পানিতে ডুবে থাকা রাস্তার পাশেই দু’দিক থেকে হাওরের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে, সৃষ্টি করে এক অভাবনীয় দৃশ্যপট। রাস্তার কিছু অংশ পানির উপর থাকে, আর কিছু অংশ হালকা ডুবে যায়। এই ভাসমান প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেকটাই সমুদ্র সৈকতের মতোই মনে হয়, বিশেষত যখন ঢেউ এসে ছুঁয়ে যায় রাস্তাকে।

বিশেষ করে বিকেলের সময়টায়, যখন সূর্যের আলো হাওরের জলে প্রতিফলিত হয়ে সোনালি দীপ্তি ছড়িয়ে দেয়, তখন অসংখ্য মানুষ পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে ছুটে আসেন এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কেউ হেঁটে বেড়ান ডুবে থাকা রাস্তায়, কেউ দৌড়ান, আবার কেউ সাঁতার কাটেন ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। এই দৃশ্য অনেকের চোখে যেন কক্সবাজারেরই প্রতিচ্ছবি।

এখানে একটি বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে—এটিই হচ্ছে বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম-এর বাড়ি ধল গ্রামে যাওয়ার পথ। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত এই জনপদ আজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে আরেকবার উঠে এসেছে আলোচনায়।


ফেসবুক, টিকটকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই জায়গার ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়ে পড়েছে। “দিরাই মিনি কক্সবাজার” লিখে ক্যাপশন দিচ্ছেন অনেকেই। পর্যটনপ্রেমীদের দৃষ্টি কেড়েছে এই এলাকা।

এই স্থানকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নিয়েছেন দিরাই উপজেলা প্রশাসন।

স্থানীয় জনগণ মনে করেন, যদি সঠিক পরিকল্পনা ও সংরক্ষণ হয়, তবে এটি হয়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম হাওরকেন্দ্রিক পর্যটন স্পট।


স্থানীয়দের মধ্যে আমিরুল ইসলাম বলেন, “হাওরের এই অপার সৌন্দর্যকে কেন্দ্র করে এখানে একটি প্রাণবন্ত পর্যটন শিল্প গড়ে উঠবে। এতে যেমন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, তেমনি দিরাইয়ের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নও ঘটবে।”


হাওর মানেই শুধু জলাভূমি নয়, হাওর মানেই অপার সৌন্দর্য, সংস্কৃতি আর সম্ভাবনা। দিরাইয়ের এই মিনি কক্সবাজার তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। যেখানে প্রকৃতি তার সেরাটা বিলিয়ে দেয় প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে। শুধু প্রয়োজন একটু পরিকল্পনা, একটু যত্ন। তাহলে হয়তো একদিন দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট হিসেবে উঠে আসবে এই দিরাইয়ের হাওরপাড়।

শেখ ফরিদ

×