স্পেনের হৃদয় ভেঙে চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড

মধুর প্রতিশোধ নিয়ে নারী ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইংল্যান্ড। রবিবার রাতে সুইজারল্যান্ডের বাসেলের সেইন্ট-জ্যাকব পার্কে শিরোপানির্ধারণী ফাইনাল ম্যাচে ইংলিশ মেয়েরা ভাগ্যনির্ধারণী টাইব্রেকারে স্পেনকে ৩-১ গোলে হারিয়ে এ কৃতিত্ব দেখিয়েছে। নির্ধারিত ৯০ ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা ১-১ গোলে অমীমাংসিত ছিল। এর ফলে টানা দ্বিতীয়বার মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে ফুটবলের জনকরা। 
ইউরোতে ইংল্যান্ডের আগে টানা শিরোপা জেতার কৃতিত্ব ছিল জার্মানির। ১৯৯৫ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৬ বার শিরোপা জিতেছিল জার্মান মেয়েরা। দুই বছর আগে বিশ্বকাপ ফাইনালে স্পেনের মেয়েদের কাছে হারলেও মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে জিতে মধুর প্রতিশোধ নিয়েছে ইংলিশ মেয়েরা। ফাইনালে বল দখলে ও আক্রমণে দাপট দেখায় স্পেন। অধরা স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ২৫ মিনিটে গোল করে এগিয়েও যায় তারা। তবে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে টেনে নেয় ইংল্যান্ড। পরে টাইব্রেকারে শেষ হাসি হাসল তারাই। ধরে রাখে শিরোপা। ১৯৮৪ সালে প্রথম আসরের পর এবারই প্রথম টাইব্রেকারে নিষ্পত্তি হয়েছে নারী ইউরোর ফাইনাল।
টাইব্রেকারে ইংল্যান্ডের শুরুটা মোটেও ভালো ছিল না। বেথ মিড পা পিছলে পড়ে গিয়ে ‘ডাবল টাচে’ বল জালে পাঠানোর পর পুনরায় শট নিতে হয় তাকে। এবার তার প্রচেষ্টা ঠেকিয়ে দেন স্পেনের গোলরক্ষক। তবে ইংল্যান্ডের পরের চার শটের তিনটিই খুঁজে পায় জাল। জার্মানির বিপক্ষে সেমিফাইনালে ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেওয়া বার্সেলোনা তারকা আইতানা  বোনমাতিসহ স্পেনের তিন জন টাইব্রেকারে গোল করতে ব্যর্থ হন।

যার দুটি শট রুখে দেন ইংলিশ গোলরক্ষক। ২০২৩ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ জয়ের পর, এবার প্রথমবার ইউরোর ফাইনালে উঠলেও শিরোপা অধরাই রয়ে গেল স্পেনের মেয়েদের। অন্যদিকে তৃতীয় দল হিসেবে এই প্রতিযোগিতায় একাধিক শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছে ইংল্যান্ডের মেয়েরা। তাদের মতো দুইবারের শিরোপা জয়ী নরওয়ে। আর রেকর্ড আটবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি।
ম্যাচের ২৫ মিনিটে এগিয়ে যায় স্পেন। বক্সে ডানদিক থেকে আসা ক্রসে হেডে ঠিকানা খুঁজে নেন আর্সেনাল ফরোয়ার্ড মারিওনা কালদেন্তে। বিরতির পর ৫৭ মিনিটে সমতা ফেরায় ইংল্যান্ড। প্রথমার্ধের শেষদিকে বদলি নামা কেলির ক্রসে বক্সে হেডে গোল করেন আর্সেনাল ফরোয়ার্ড অ্যালেসিয়া রুশো। এরপর টাইব্রেকারে স্পেনের স্বপ্ন ভেঙে উল্লাসে মাতে ইংল্যান্ড।

টাইব্রেকারে প্রথম চার শটের তিনটিতেই গোল করতে ব্যর্থ হয় স্প্যানিশ মেয়েরা। যেখানে ইউরোর সেরা খেলোয়াড় এবং ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকা আইতানা বোনমাতিও আছেন। অন্যদিকে ইংল্যান্ড নিজেদের প্রথম ৪ শটের ২টিতে গোল করে। অথচ টাইব্রেকারে প্রথম শটে স্পেন গোল করলেও মিস করে ইংল্যান্ড। 
ইংল্যান্ডের হয়ে পঞ্চম ও শেষ শটটি নেন কেলি। শিরোপা নির্ধারণী এই শটে কোনো ভুল করেননি ২৭ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। দারুণ শটে কেলি বল জালে জড়াতেই উল্লাসে মাতে ইংলিশ মেয়েরা। এর আগে ২০২২ ইউরোর ফাইনালেও জয়সূচক গোলটা এসেছিল কেলির কাছ থেকে। শিরোপা জয়ের পর উচ্ছ্বসিত কেলি নিজের নেওয়া শেষ শট সম্পর্কে বলেছেন, আমি শান্ত ছিলাম, সংযত ছিলাম। আমি জানতাম বলটা জালে জড়াবে।

ইংল্যান্ডের জয়ের অন্যতম কারিগর দলটির কোচ সারিনা ভাইগমান। চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ বলেন, আমরা বলেছিলাম যে কোনো না কোনো উপায়ে চ্যাম্পিয়ন হব। আবারও সেটা প্রমাণ করেছি। দল এবং স্টাফদের নিয়ে খুব গর্বিত আমি। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছি না। প্রথম ম্যাচ হারের পর ইউরো চ্যাম্পিয়ন হওয়া সত্যিই অবিশ্বাস্য।