ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

সাধারণ ছবি থেকেই অশালীন ভুয়া ছবি বানাচ্ছে অবৈধ এআই, পদক্ষেপ নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ

প্রকাশিত: ০৯:১০, ২৯ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৯:১১, ২৯ জুলাই ২০২৫

সাধারণ ছবি থেকেই অশালীন ভুয়া ছবি বানাচ্ছে অবৈধ এআই, পদক্ষেপ নিচ্ছে বিভিন্ন দেশ

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে এমন এক প্রযুক্তি যা ভয়ঙ্কর ও অপমানজনক। ‘নিউডিফিকেশন অ্যাপ’ নামের এআই-চালিত সফটওয়্যারগুলো দিয়ে কোনো সাধারণ পোশাক পরা ছবিকে অতি সহজেই রূপান্তর করা যাচ্ছে ভুয়া অশ্লীল ছবিতে। একবার ছবি আপলোড করলেই তৈরি হয়ে যাচ্ছে বিভ্রান্তিকর অশ্লীল ছবি, যা অধিকাংশ সময়ই টার্গেট করছে মেয়েদের—তাদের সম্মতি ছাড়াই।

১৫ মিলিয়ন ডাউনলোড: পরিণত হচ্ছে ভয়াবহ সামাজিক সংকটে

২০২২ সাল থেকে এ ধরনের অ্যাপ ১ কোটি ৫০ লাখের বেশি ডাউনলোড হয়েছে। শুধু ব্যক্তিগত অপমানই নয়, এসব ছবি এখন ব্ল্যাকমেইল, সাইবারবুলিং ও সহিংসতার হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। গবেষণা বলছে, ৯৯ শতাংশ ভুয়া যৌন কনটেন্ট নারী বা কিশোরীদের লক্ষ্য করে বানানো হয়।

উন্নত দেশগুলোতে এসব ভুয়া ছবি ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিগত জীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে এমন অনেক দেশ আছে, যেখানে এসব ছবি নারীদের জন্য জীবনের ঝুঁকি তৈরি করে। কোথাও সমাজচ্যুতি, কোথাও হয়তো শাস্তি পর্যন্ত হতে পারে।

শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না: শিশু পর্ন কনটেন্ট ৪০০ শতাংশ বেড়েছে

২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসেই শিশুদের নিয়ে বানানো এআই-চালিত যৌন কনটেন্ট হোস্ট করা ওয়েবসাইটের সংখ্যা ৪০০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানায় ইন্টারনেট ওয়াচ ফাউন্ডেশন। এসব ছবি যদি বাস্তব শিশুর ছবি থেকেও না হয়, তবু সেগুলোর ক্ষতিকর প্রভাব অস্বীকার করার সুযোগ নেই।

এই অবৈধ এআই শিল্প এখন বড় অপরাধ সিন্ডিকেটে পরিণত হয়েছে। মিডিয়া রিপোর্ট বলছে, অনেক অপরাধী এসব কনটেন্ট বিক্রি করে মিলিয়ন ডলার আয় করছে।

আইন কোথায় দাঁড়াচ্ছে?

যুক্তরাষ্ট্র:

‘Take It Down’ আইন অনুসারে সোশ্যাল মিডিয়া ও অনলাইন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করা হয়েছে ভুয়া ছবি সরাতে। ক্যালিফোর্নিয়া ও মিনেসোটার মতো রাজ্যগুলো এ ধরনের কনটেন্ট ছড়ানোকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

যুক্তরাজ্য:

শুধু ছড়ানো নয়, এমন ছবি তৈরি করাকেও অপরাধ হিসেবে গণ্য করার পরিকল্পনা চলছে। কিছু প্রস্তাবনা আছে এই অ্যাপগুলো নিষিদ্ধ করার। তবে এখানেও সমস্যা—এআই ব্যবহারকারী বৈধ শিল্পচর্চার সঙ্গে এই অপরাধমূলক অ্যাপের পার্থক্য কীভাবে নির্ধারণ করা হবে?

চীন:

চীন ইতোমধ্যেই এআই নিয়ন্ত্রণে আইন করেছে যেখানে প্রতিটি কনটেন্টে ওয়াটারমার্ক যুক্ত করার বাধ্যবাধকতা আছে যাতে উৎস শনাক্ত করা যায়। এ ছাড়া বেআইনি ব্যবহারের বিরুদ্ধে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখারও নির্দেশনা রয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া:

সেখানে বিষয়টিকে শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। স্কুলগুলোকে বলা হয়েছে, এমন সব ঘটনা যেন সরাসরি পুলিশের কাছে জানানো হয়।

প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কী করছে?

এই মাসেই মেটা (ফেসবুকের মূল কোম্পানি) ‘CrushAI’ অ্যাপ নির্মাতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তাদের অভিযোগ, ফেসবুকের নিয়ম এড়িয়ে নিউডিফিকেশন অ্যাপ প্রচারের চেষ্টা করা হয়েছে।

সমাজ কী করতে পারে?

শিক্ষা: স্কুল পর্যায়ে শিশুদের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে জোর দিতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে এই ধরনের কাজ কীভাবে কারও জীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।

কর্মস্থলে প্রস্তুতি: বিশেষ করে নারীদের রক্ষা করতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই ধরনের হয়রানির ক্ষেত্রে সমর্থন নীতিমালা তৈরি করতে হবে।

প্রযুক্তিগত সমাধান: ছবিতে ওয়াটারমার্ক, এআই-ভিত্তিক ফিল্টারিং ও ব্যবহারকারীদের সম্মিলিত নজরদারি ব্যবস্থার মাধ্যমে এসব কনটেন্ট সনাক্ত ও সরানো সম্ভব হতে পারে।

এআই এখন শুধুই ভবিষ্যৎ নয়—এটি আমাদের বাস্তবতার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনই যদি যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে ভুয়া যৌন কনটেন্ট ভবিষ্যতের বড় সামাজিক সংকটে পরিণত হবে।

 

সূত্র: ফোর্বস।

রাকিব

×