ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২

উত্তর মেরুতে সবুজ পরিবেশ, হতবাক বিজ্ঞানীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৪০, ৩০ জুলাই ২০২৫

উত্তর মেরুতে সবুজ পরিবেশ, হতবাক বিজ্ঞানীরা

বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় ছয় থেকে সাতগুণ উষ্ণ হচ্ছে আর্কটিকের তাপমাত্রা

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আর্কটিকের তুষারপাত নিয়ে গবেষণার জন্য সুমেরু অঞ্চলে গিয়েছিলেন কিছু বিজ্ঞানী। তবে সেখানে গিয়ে তুষারপাতের বদলে বৃষ্টির মধ্যে জলাশয়ে দাঁড়িয়ে থেকে আশপাশের সবুজ পরিবেশ ও বৃষ্টি দেখে হতবাক হয়েছেন তারা। মাঠ পর্যায়ের এ গবেষণাটি হয়েছে আর্কটিক মহাসাগরের দ্বীপ সভালবার্ডে। খবর ইয়াহু নিউজের।
এ গবেষণার অভিজ্ঞতা তাদের চোখ খুলে দেওয়ার পাশাপাশি আর্কটিকের আবহাওয়া কত দ্রুত বদলে যাচ্ছে সে সম্পর্কে জোরালো সতর্কবার্তা দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। এ গবেষণা দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. জেমস ব্র্যাডলি। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল নেচার কমিউনিকেশন্সে, যেখানে নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন তারা।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় ছয় থেকে সাত গুণ দ্রুত হারে উষ্ণ হচ্ছে সভালবার্ডের তাপমাত্রা। আগে যেখানে শীতকালে বরফ জমে থাকত এখন সেখানে নিয়মিত উষ্ণ তাপমাত্রা, ভারি বৃষ্টি ও দ্রুত বরফ গলন দেখা যাচ্ছে। ড. ব্রাডলি বলেছেন, আমরা যে ঘন বরফের আশা করেছিলাম তা কয়েক দিনের মধ্যে পুরোপুরি গলে গিয়েছে। আমরা যে কাপড় নিয়ে গিয়েছিলাম সেগুলো যেন একেবারেই ভিন্ন কোনো আবহাওয়ার জন্য তৈরি বলে মনে হয়েছিল আমাদের।

যে তীব্র ঠাণ্ডার জন্য গবেষকরা গ্লাভস নিয়ে গিয়েছিলেন তার বদলে বৃষ্টির মধ্যে খালি হাতে কাজ করতে হয়েছে তাদের, যা সাধারণ আর্কটিকের শীতকালীন পরিবেশ থেকে একেবারেই বিস্ময়কর এক পরিবর্তন বলে দাবি গবেষকদের। গবেষণা দলটির লক্ষ্য ছিল, সদ্য পড়া তুষার নিয়ে গবেষণা করবেন তারা। কিন্তু দুই সপ্তাহে কেবল একবারই তুষারপাতের দেখা পেয়েছে দলটি। বেশিরভাগ সময় ভারি বর্ষণ হয়েছে, যা সেখানকার বরফ গলিয়ে ভূমিকে প্লাবিত করেছিল। 
কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের পিএইচডি গবেষক লরা মোলারেস মনকায়ো বলেছেন, এ উষ্ণ আবহাওয়া কেবল তাদের গবেষণাই নষ্ট করেনি বরং নিরাপত্তার উদ্বেগও তৈরি করেছিল। বরফ গলে যাওয়ার কারণে স্নোমোবিল ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। ফলে নিরাপদে চলাচলের জন্য নতুন পরিকল্পনা করতে হয়েছে দলটিকে, বিশেষ করে সেই এলাকায় যেখানে পোলার বিয়ার বা মেরু ভালুক থাকে সেসব অঞ্চলের বেলায়।

নাটকীয়ভাবে এই বরফ গলে যাওয়াকে আর্কটিক অ্যামপ্লিফিকেশন বলে বর্ণনা করেছেন বিজ্ঞানীরা। যার মানে, পৃথিবীর অন্য অংশের তুলনায় অনেক দ্রুত উত্তপ্ত হচ্ছে আর্কটিক অঞ্চল। স্বাভাবিকভাবেই কিছু পরিবর্তন গবেষকরা আশা করেছিলেন। তবে তারা ভাবেনি বছরের সবচেয়ে ঠান্ডা সময়েই এতটা উষ্ণ পরিবেশের দেখা মিলবে। সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক আগেই আর্টটিকের বরফ গলে যাওয়া থেকে শুরু করে জীববৈচিত্র্যের দ্রুত বৃদ্ধি, বিশেষ করে সেখানে গাছপালা ও ফুল ফুটতে দেখেছেন গবেষকরা।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব পরিবর্তন কেবল বিজ্ঞানীদের জন্য সমস্যারই নয়, বরং পুরো আর্কটিক বাস্তুতন্ত্রের জন্যও গুরুতর প্রভাব ফেলছে। শীতকালে উষ্ণতার ফলে বন্যপ্রাণীর বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে, গলতে থাকা পার্মাফ্রস্ট থেকে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায় ও এসব কারণে জলবায়ু পরিবর্তন আরও দ্রুত ঘটে। গবেষণা দলটি সতর্ক করে বলছে, জরুরি ভিত্তিতে আর্কটিকের শীতকালীন আবহাওয়ার ওপর ভালো পর্যবেক্ষণ ও আরও তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। কারণ আর্কটিকের এ ঋতু নিয়ে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে কম গবেষণা হয়েছে, অথচ এ ঋতুটিতেই পরিবর্তন হচ্ছে সবচেয়ে দ্রুত। 
গবেষকরা নীতিনির্ধারকদের অনুরোধ করছেন, এসব পরিবর্তনের প্রতি কেবল সাড়া দিয়ে দায়িত্ব শেষ না করে, পরের বছরের জন্য আগাম পরিকল্পনাও যেন করা হয়। আর্কটিকের শীতে অস্বাভাবিক উষ্ণতা এখন আর কোনো ভবিষ্যৎ আশঙ্কা নয়; এটি এখনকারই চরম বাস্তবতা, যা একদিকে যেমন বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে প্রভাবিত করছে, তেমনি হুমকির মুখে ফেলছে সেখানকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের জীবনধারা ও অবকাঠামো।

ড. ব্রাডলি বলেছেন, আর্কটিক নিয়ে যেমনটি আশা করা হয়েছিল তার চেয়ে দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এ অঞ্চল। আর সেসব পরিবর্তনের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এ অঞ্চলের শীতকাল। সভালবার্ড শীতের উষ্ণতা গলনাঙ্কে পৌঁছাচ্ছে শিরোনামের এ গবেষণাটি আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে, আগে যা কল্পনাও করা যেত না, যেমন- আর্কটিকে শীতকালে বৃষ্টি ও সবুজে ঘেরা পরিবেশ, এখন সেটিই এখানকার বাস্তবতা।

প্যানেল হু

×