
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।
পটুয়াখালীর ভূরিয়া ইউনিয়নের ভায়লা গ্রামে প্রবাহমান সরকারি খালে ১৮টি বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি বর্তমানে ছোট-বড় পুকুর ও ঘেরে পরিণত হয়েছে। এর ফলে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে বর্ষাকালে খালের দুই পাড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এতে অন্তত দেড় হাজার একর ফসলি জমিতে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে এবং খালপাড়ের বসবাসকারীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
স্থানীয়দের কাছে খালটি 'পূর্ব ভায়লা দেওয়ানী খাল' নামে পরিচিত। এক সময় এটি খরস্রোতা ছিল এবং কোথাও প্রস্থে ৪০ ফুট, কোথাও ১০০ ফুট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। বর্তমানে ১৮টি বাঁধ দেওয়ায় খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে কৃষির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
পটুয়াখালী সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গাজী আঃ ছত্তার জানান, দেওয়ানী খালে বাঁধ দিয়ে ঘের করায় পানি ওঠানামা বন্ধ হয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভায়লা গ্রামের লোহালিয়া নদীসংলগ্ন সোমবাড়ীয়া বাজার থেকে খালটি কাশীপুর শাখা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। খালের বিভিন্ন স্থানে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে পুকুর ও ঘের তৈরি করা হয়েছে। অনেক জায়গায় খালটি দেখতে পুকুরের সারির মতো মনে হয়। এসব ঘেরে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ দেশি প্রজাতির মাছ চাষ হচ্ছে। অনেক স্থানে আমন ধানের বীজতলা পানিতে তলিয়ে গেছে, খালের আশেপাশের বাড়িঘরেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
ভায়লা গ্রামের মনির মাঝি (৪০) বলেন, “বৃষ্টি হলে পানি সরতে পারে না, জমি তলিয়ে যায়। আমার ১২ একর জমির জন্য ২ মন আমন ধানের বীজতলা করেছিলাম, তা পচে গেছে। আবার নতুন করে ১ মন বীজতলা করেছিলাম, সেটাও আবার ডুবে গেছে।”
পূর্ব ভায়লা গ্রামের জয়ফুল বেগম (৩৫) বলেন, “বৃষ্টি হলেই উঠান ডুবে যায়। ঘরের ভিতরে পানি ঢুকে যায়। মাটির ভিটে সরে যাচ্ছে। আমরা ঘরবন্দি হয়ে পড়ি। এই সমস্যার মূল কারণ খালে বাঁধ।”
সাবেক ইউপি সদস্য আঃ ছত্তার খন্দকার (৯০) বলেন, “বছরের পর বছর ধরে খালে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ হচ্ছে। কোনো সরকারি অনুমতি ছাড়াই খালটিকে ছোট ছোট পুকুরে ভাগ করে ফেলা হয়েছে। এতে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।”
স্থানীয় সোলেমান হাওলাদার বলেন, “শুধু আমি না, আরও অনেকেই বাঁধ দিয়েছে। যাঁর যাঁর বাড়ির সামনে বাঁধ দিয়ে যাতায়াতের পথ করেছে এবং পুকুর বানিয়ে মাছ চাষ করছে।”
সোবাহান হাওলাদার (৫৫) জানান, “বাড়ির যাতায়াতের জন্যই বাঁধ দিয়েছি। কেউ বাঁধা দেয়নি। তবে যদি বলা হয়, আমি বাঁধ কেটে দেব।”
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে পটুয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইফ্ফাত আরা জামান উর্মি বলেন, “আমি বিষয়টি জানি না। তবে কোনোভাবেই সরকারি খালের স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ করা যাবে না। স্থানীয়দের সহায়তায় বাঁধ অপসারণ করে খালটি উন্মুক্ত করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মিরাজ খান