
আকাশপথে এক ভয়ানক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন ডেল্টা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের যাত্রীরা। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সল্ট লেক সিটি থেকে অ্যামস্টারডামগামী ফ্লাইটটি আচমকা ভয়াবহ টার্বুলেন্সের কবলে পড়ে। তীব্র ঝাঁকুনিতে বিমানের খাবারের ট্রলি, মোবাইল ফোন এবং সিটবেল্ট না পরা যাত্রীরা ছিটকে গিয়ে ছাদের সঙ্গে ধাক্কা খান।
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয় বিমানটি। পরে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপোলিস-সেন্ট পল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে, এবং অন্তত ২৫ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ডেল্টা জানায়, ফ্লাইট DL56 নিরাপদে অবতরণ করে এবং সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল টিম বিমানে ওঠে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, বিমানের অবতরণের সময় রানওয়েতে প্রস্তুত ছিল দমকল ও উদ্ধারকারী বাহিনী।
যাত্রী জোসেফ কার্বোনে সিএনএনকে বলেন, "আমি আমার স্ত্রীর হাত ধরে বসে ছিলাম। সত্যি বলছি, মনে হচ্ছিল বিমানটি আর নাও বাঁচতে পারে।" তিনি জানান, ঝাঁকুনির সময় একটি ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ছাদে গিয়ে ধাক্কা খেয়েছিলেন।
ফ্লাইটটি সম্ভবত দক্ষিণ-পশ্চিম ওয়াইওমিংয়ের আকাশে প্রবেশ করার সময় এই তীব্র টার্বুলেন্সের শিকার হয়। আগেই মার্কিন আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ ওই অঞ্চলকে সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
ডেল্টা এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, আহত যাত্রীদের মূল্যায়নের জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে যারা তাদের অবস্থা জানাতে রাজি ছিলেন, তারা সবাই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। সাতজন ক্রু সদস্যও চিকিৎসা শেষে ছাড়া পান।
বিমানটিতে মোট ২৭৫ জন যাত্রী ও ১৩ জন ক্রু ছিলেন বলে জানিয়েছে ডেল্টা। তবে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি, হাসপাতালে পাঠানো সবাই ছাড়া পেয়েছেন কিনা।
এক যাত্রী উইলিয়াম ওয়েবস্টার জানান, তিনি বছরে প্রায় ৮০টি ফ্লাইট করেন, কিন্তু এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা এর আগে কখনও হয়নি। “আমি আমার সিট থেকে প্রায় ৩০ সেকেন্ড বাতাসে ভেসে ছিলাম,” বলেন তিনি।
অন্যদিকে, আরেক দম্পতি এবিসি নিউজকে জানান, যখন ঝাঁকুনি শুরু হয় তখনই ডিনার সার্ভিস শুরু হয়েছিল। লিয়ান ক্লেমেন্ট-নাশ বলেন, “যারা সিটবেল্ট বাঁধেননি, তারা সবাই আকাশে উঠে ছাদে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়েছেন। খাবারের ট্রলিও ছিটকে পড়ে গেছে।”
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটে বিমানটি অবতরণ করে। বিমানবন্দরের দমকল ও প্যারামেডিক টিম গেটে পৌঁছে আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেন, পরে কয়েকজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবার সল্ট লেক সিটি শাখা বুধবার ওয়াইওমিংয়ের ওপর বজ্রঝড়ের সম্ভাবনার বিষয়ে আগাম সতর্কতা জারি করেছিল। সিএনএনের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ওই সন্ধ্যায় ঝড়ের মেঘের উচ্চতা পৌঁছেছিল ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার ফুট পর্যন্ত। আর বিমানের উড়ান উচ্চতা ছিল ঠিক সেই সময় ৩৫ হাজার ফুটের কাছাকাছি।
ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইট Flightradar24-এর তথ্য অনুযায়ী, টার্বুলেন্স শুরু হওয়ার প্রায় ৪০ মিনিট পর বিমানটি হঠাৎ ৩০ সেকেন্ডে এক হাজার ফুট উপরে উঠে যায়, পরে আবার নেমে আসে প্রায় ১,৩৫০ ফুট। এরপরই বিমানটি মিনিয়াপোলিস-সেন্ট পলের দিকে রুট পরিবর্তন করে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা বোর্ড (NTSB) জানায়, তারা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে এবং আগামী এক মাসের মধ্যে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। একই সঙ্গে ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনও (FAA) নিশ্চিত করেছে যে, এই ‘তীব্র’ টার্বুলেন্সের ঘটনায় তারা তদন্ত শুরু করবে।
প্রসঙ্গত, গত বছর ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটেও একই রকম টার্বুলেন্সে সাতজন আহত হয়েছিলেন। তাছাড়া চলতি বছর মার্চ মাসেও একাধিক ফ্লাইট টার্বুলেন্সের কারণে ওয়াকো, টেক্সাসে জরুরি অবতরণ করেছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টার্বুলেন্স নিয়মিতই ঘটে, তবে কখনও কখনও এটি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে, বিশেষ করে যখন যাত্রীরা সিটবেল্ট বাঁধেন না। তাই আকাশে ভ্রমণের সময় সবসময় সতর্ক থাকা এবং সিটবেল্ট বাঁধা রাখা খুবই জরুরি।
ডেল্টা ফ্লাইট DL56-এর ঘটনাটি স্মরণ করিয়ে দেয়, আধুনিক প্রযুক্তি আর শক্তিশালী বিমানের যুগেও প্রকৃতির অনিয়ন্ত্রিত শক্তির সামনে মানুষ কতটা অসহায় হতে পারে। কর্তৃপক্ষ বলছে, ভবিষ্যতে এমন ঝুঁকি এড়াতে আরও উন্নত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।
সূত্র:https://tinyurl.com/3cyabawb
আফরোজা