ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিমানের সবচেয়ে নিরাপদ সিট কি ১১এ? কী বললেন বিশেষজ্ঞরা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:১২, ১৪ জুন ২০২৫

বিমানের সবচেয়ে নিরাপদ সিট কি ১১এ? কী বললেন বিশেষজ্ঞরা

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের আহমেদাবাদে গত বৃহস্পতিবার ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় যখন গোটা বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮ উড়োজাহাজটি ভূপাতিত হয়ে আগুনে ছারখার হয়ে যায়, তখন ২২৯ যাত্রী, দুই পাইলট এবং ক্রু-সহ সবাই নিহত হন। কেবল একজন বেঁচে যান—ব্রিটিশ ভারতীয় ব্যবসায়ী বিষ্ণু কুমার রমেশ। অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যাওয়া এই যাত্রী ছিলেন ১১এ নম্বর আসনে।

৪০ বছর বয়সী বিষ্ণু রমেশ বলেন, "একসময় মনে হচ্ছিল আমি মারা যাচ্ছি। কিন্তু চোখ খুলে দেখি আমি বেঁচে আছি। সিটবেল্ট খুলে নিজেই বের হয়ে এসেছি। আমার চোখের সামনেই এয়ারহোস্টেস, আর আশেপাশের আঙ্কেল-আন্টিরা মারা গেলেন।"

এই সিটটি ছিল ইকোনমি ক্লাসের প্রথম সারিতে, বিজনেস ক্লাসের ঠিক পেছনে, বিমানের বাম পাশের ইমার্জেন্সি এক্সিটের কাছাকাছি। বিমানটি মাটি ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার সামনের বাম অংশ ভেঙে পড়ে, কিন্তু মাঝ বা পেছনের অংশ ভয়াবহভাবে ধ্বংস হয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণভাবে বিমানের পেছনের আসনগুলো তুলনামূলক নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে এই দুর্ঘটনায় সেটি প্রযোজ্য হয়নি। ১১এ সিট মাঝখানে হলেও অলৌকিকভাবে বেঁচে যান যাত্রীটি। 

এভিয়েশন সেফটির ওপর গবেষণা করা বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সমীক্ষা বলছে, বিমান দুর্ঘটনায় সাধারণত বিমানের পেছনের অংশে বসা যাত্রীদের বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে বেশি। ২০০৭ সালে Popular Mechanics পত্রিকার এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের পর থেকে হওয়া বিভিন্ন দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া গিয়েছে যে বিমানের পেছনের ৪০% অংশে বসা যাত্রীরা সামনের বা মাঝের আসনের তুলনায় ৬৯% বেশি বেঁচে থাকার সম্ভাবনা পান।

তবে এই বিশেষ ক্ষেত্রে সেই পরিসংখ্যান কার্যকর হয়নি। বিমান বিশ্লেষক অঙ্গদ সিং এনডিটিভিকে বলেন, “১১এ সিটটি বিমানের মাঝ বরাবর, উইংয়ের আগেই অবস্থিত। সাধারণভাবে একে নিরাপদ বলা যায় না। এখানে একমাত্র ব্যাখ্যা হচ্ছে—এটি একটি অলৌকিক ঘটনা।”

তিনি আরও বলেন, “বিমানের যে আগুনে বিস্ফোরণ আমরা দেখেছি, এবং ধ্বংসস্তূপের যা অবস্থা হয়েছে, তাতে করে ওই সিটে বসে কেউ জীবিত বের হয়ে আসতে পারবে—এটা শুধু ঈশ্বরের আশীর্বাদ ছাড়া কিছুই নয়।”

ফ্লাইট সেফটি ফাউন্ডেশনের পরিচালক মিচেল ফক্স বলেন, “প্রত্যেকটি বিমান দুর্ঘটনা একেক রকম। সেজন্য নির্দিষ্ট করে বলা যায় না যে একটি নির্দিষ্ট সিট সব সময় নিরাপদ। বিমানের কাঠামো, দুর্ঘটনার ধরন, আগুন কোথা থেকে শুরু হলো, ফুয়েল ট্যাংক কোথায় ছিল—এসব অনেক বিষয় মিলে একজন যাত্রীর বেঁচে থাকা নির্ধারণ করে।”

অন্যদিকে কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বিমানের উইং অংশ তুলনামূলক বেশি কাঠামোগত স্থিতিশীল হলেও, এই অংশেই ফুয়েল ট্যাংক থাকে, যার ফলে আগুন ধরে যাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি।

কী কারণে ভেঙে পড়ল বিমান?
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল জানিয়েছে, উড্ডয়নের পরপরই পাইলট 'মেডে' সংকেত পাঠান, যার অর্থ হলো জরুরি অবস্থা। তদন্তকারীরা বলছেন, উড়োজাহাজটির দুই ইঞ্জিনেই থ্রাস্ট (চাপ) কমে যায় অথবা বার্ড হিটের মতো ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ঘটনার পর ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার একযোগে কাজ করছে।

মুমু ২

×