
পাঁচ সন্তানের ঘরে জায়গা হয়নি ৭৪ বছর বয়সী মোফাজ্জল হোসেনের। ১৫ জন নাতি-নাতনিকে দেখার জন্য মন কাঁদে। সন্তানদের প্রতি অভিমান থাকলেও কোনো লোভ বা ক্ষোভ নেই। কষ্টের কথা মনে হলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন না। এখন তার ঠিকানা—নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ উপজেলার “নিরাপদ বৃদ্ধাশ্রম”।
আজ রবিবার (১৫ জুন) বাবা দিবসে জনকণ্ঠের প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় এই বৃদ্ধের। জানালেন, এক সময় সংসারে ছিল সুখ, ছিল ভালোবাসা। নিজের সব জমি-জমা সন্তানদের হাতে তুলে দিয়েও ঠাঁই পাননি তাদের কাছে। এখন সন্তানরা খবর নেয় না। নাতি-নাতনিরা যেন তাকে ভুলেই গেছে।
শুধু মোফাজ্জল হোসেন নন, এই আশ্রমে আশ্রয় নিয়েছেন আরও অনেকে। কারো সন্তান বিদেশে, কেউ আবার বাবা-মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। কেউ হয়েছেন প্রতারণার শিকার, কেউ নিপীড়নের। এই আশ্রমে থাকা প্রতিটি বাবার গল্পেই আছে কষ্ট আর না-পাওয়ার দীর্ঘ তালিকা।
এখানে রয়েছেন আনোয়ারুল ইসলাম দুলাল, যিনি নিজের কোনো সন্তান না থাকায় এক ছেলে ও এক মেয়েকে দত্তক নিয়ে মানুষ করেছেন। তারা এখন বিদেশে থাকলেও বাবার কোনো খোঁজ রাখেন না। দুলাল বলেন, “ছেলে-মেয়ে দেশের বাইরে, খবরও নেয় না। এখানেই আছি, ভালো আছি।”
এই বৃদ্ধাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা সাজেদুর রহমান সাজু বলেন, “আমি বৃদ্ধ বাবা-মায়েদের সেবা করে আনন্দ পাই।” ২০১৮ সালে নিজের উপার্জিত অর্থে এই আশ্রম গড়েছেন তিনি। এখন ৩৭ জন বাবা-মা এখানকার বাসিন্দা। এর মধ্যে অনেকে অসুস্থ, কেউ বিছানায় শয্যাশায়ী।
সাজু জানান, এখন পর্যন্ত ৫৬ জন বৃদ্ধ বাবা-মাকে তাদের সন্তানের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাদের খাবার, ওষুধ, কাপড়—সবই ফ্রি। সমাজের বিত্তবানদের কাছে তিনি আহ্বান জানিয়েছেন—এই আশ্রমে এসে সশরীরে দেখে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে।
বৃদ্ধাশ্রমে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবিকা হুমায়রা আক্তার জানান, “এখানে থাকা বেশিরভাগ বাবা-মা অসুস্থ। ফিজিওথেরাপি দিয়ে তাদের চলাফেরায় সহায়তা করি।” তিনি বলেন, “বাবা-মা নিজের জান্নাত, সেই জান্নাতটা যেন অন্যের হাতে তুলে না দেই।”
নীলফামারীর জেলা প্রশাসন নিয়মিত সহায়তা দিয়ে আসছে। এবারের কোরবানির ঈদে ডিসি মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান নিজে এসে কোরবানি করে বৃদ্ধাশ্রমের বাবা-মায়েদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে নেন।
সানজানা