ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

ভালোবাসি বাবা

ইসরাফিল ফরাজী

প্রকাশিত: ১৮:০২, ১৫ জুন ২০২৫

ভালোবাসি বাবা

ছবিঃ সংগৃহীত

“তোমার ছায়ার নিচে পেয়েছি পৃথিবীর সবচেয়ে শান্ত আশ্রয়।
তুমি হয়তো বলো না কিছু,
তবু আমি বুঝি—তুমি ভালোবাসো, নিঃশব্দে, নিরন্তর।”

জীবনের পথে চলতে চলতে আমরা বুঝতে শিখি অনেক কিছু। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধিটি আসে তখনই, যখন বুঝি—যে মানুষটি সারাজীবন নিজের স্বপ্নগুলো বিসর্জন দিয়ে আমাদের স্বপ্ন গড়ার মাটিটা তৈরি করলেন, তিনি হলেন বাবা।

বাবা কখনো আকাশ হয়ে আমাদের মাথার ওপর ছায়া দেন, কখনো আবার পাহাড় হয়ে দাঁড়ান দুর্যোগের সামনে। তিনি হয়তো আমাদের মায়ের মতো মুখে মুখে ভালোবাসা জানান না, তবু তাঁর প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি ত্যাগের মাঝে লুকিয়ে থাকে অতল গভীর ভালোবাসা।

শৈশবে যাকে মনে হতো একরোখা, রাগী; কৈশোরে যিনি হয়ে উঠতেন একটু কঠোর, বোঝার বয়সে এসে দেখি, তিনিই ছিলেন জীবনের আসল আশ্রয়।

যে সকালে ঘুম ভাঙতো বাবার ডাকডাকে, সেই বাবা নিজের অফিসে যাবার আগে নাস্তা না খেয়েই বেরিয়ে পড়তেন, কেবল যেন সন্তানরা সময়মতো স্কুলে পৌঁছে যায়। যিনি সারাদিন পরিশ্রম শেষে রাত জেগে সন্তানের পাশে বসে থাকতেন পরীক্ষার আগের রাতে—তাকে কি আর শুধু “বাবা” বলে ডাকাই যথেষ্ট?

মায়ের ভালোবাসা যেমন কোমলতায় ভরা, বাবার ভালোবাসা তেমনই কঠিন বাস্তবতার ছায়ায় মোড়ানো। বাবা কখনো বলেন না, “তোমাকে ভালোবাসি।” কিন্তু সন্তানের জন্য তাঁর প্রার্থনা, ঘাম, পরিশ্রম—সবই হলো সেই শব্দহীন ভালোবাসার প্রকাশ।

সন্তানের নতুন জামা কেনা হলে পুরনো পাঞ্জাবিতেই ঈদ কাটিয়ে দেন। নিজের স্বপ্নগুলোকে বাক্সবন্দি করে সন্তানের ভবিষ্যৎ সাজান। এসব কোনো নাটক নয়, এগুলোই হলো একজন বাবার জীবন।

আজ অনেকেই বাবাকে হারিয়েছেন। কেউ হয়তো আছেন দূরে, কেউ আর নেই এই পৃথিবীতে। তবু বাবার স্মৃতি যেন অম্লান। বাবার সঙ্গে প্রথম সাইকেল চালানো, কাঁধে বসে মেলায় যাওয়া, অথবা বাজারে গিয়ে চিপস খাওয়ার ছোট্ট স্মৃতিগুলোই হয়তো আজ আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ রত্ন।

আজ যারা বাবা পাশে আছেন, তারা সৌভাগ্যবান। যারা নেই, তাদের স্মৃতির কাছে প্রণতি—কারণ তাঁরা ছিলেন বলেই আমরা আছি।

বিশ্ব বাবা দিবস: শুধু একদিন নয়, প্রতিদিন। প্রতি বছরের জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্ব বাবা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তবে বাবাকে ভালোবাসার জন্য একদিন যথেষ্ট নয়। তবুও আজকের দিনে একটু আলাদা করে বলি—
“ভালোবাসি বাবা। তুমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষক, সবচেয়ে বড় বন্ধু, আর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়।”

বিশ্বাস করুন, এই ছোট্ট কাজগুলোই বাবার চোখে আনন্দের অশ্রু এনে দিতে পারে।

বাবারা হয়তো কখনো ক্লান্তির কথা বলেন না। তবু দিনের শেষে তারাও একজন মানুষ, একজন বাবা। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে যিনি আপনার ছায়া হয়ে থেকেছেন, আজ তাঁর ছায়ার নিচে একটু বসুন। অনুভব করুন, কী বিশাল ছিলেন তিনি—সদা নীরব, কিন্তু চির অটল।

'ভালোবাসি বাবা—এই তিনটি শব্দেই লুকিয়ে আছে হাজারো না বলা গল্প।'

আজকে তিনটি ছোট কাজ করতে পারেন বাবার জন্য। যা হতে পারে বিশাল প্রাপ্তি। 

* আজ একবার বাবাকে জড়িয়ে ধরুন।
* একটি চিঠি লিখুন, যেখানে থাকবে শুধু কৃতজ্ঞতার কিছু শব্দ।
* অথবা শুধু বলুন—“তুমি আছো বলেই আজ আমি এতোটা দূর আসতে পেরেছি।”

ইমরান

×