
ছবি: সংগৃহীত।
ইসরায়েলি বিমান হামলার চতুর্থ দিনে প্রবেশ করতেই উত্তেজনা আরও বেড়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। পরিস্থিতির গভীরতা প্রকাশ করে ইরান জানিয়েছে, তারা ১৯৬৮ সালের পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT) থেকে সরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মাধ্যমে পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকি আরও বাড়ছে বলে আশঙ্কা করছে বিশ্লেষকরা।
ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত দেশটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে ২২৪ জন, যাদের ৯০ শতাংশই সাধারণ নাগরিক। আহত হয়েছে আরও ১,৪০০ জন। অন্যদিকে, ইসরায়েলে ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ২৩ জন এবং আহত প্রায় ৬০০ জন।
ইসরায়েল ও ইরান একে অপরের তেল ও গ্যাস স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানানোয় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কাও বাড়ছে। সোমবার দক্ষিণ তেহরানে তেল শোধনাগারের কাছে বিস্ফোরণের খবর মিলেছে।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাঘাই জানিয়েছেন, দেশটির পার্লামেন্ট একটি বিল প্রস্তুত করছে, যাতে ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে NPT থেকে সরে যেতে পারে। যদিও ইরান এখনও গণবিধ্বংসী অস্ত্র নির্মাণে বিরোধিতা করছে এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার এবং গবেষণার অধিকার ইরানের রয়েছে।
ইসরায়েল মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ, যা কখনও NPT-তে স্বাক্ষর করেনি। তবে ইসরায়েল দাবি করছে, ইরান বোমা বানানোর কাছাকাছি চলে আসায় তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা চালানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় নাতানজ এবং ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
IAEA-এর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি সোমবার জানিয়েছেন, ইসফাহানে চারটি পারমাণবিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইউরেনিয়াম রূপান্তর কেন্দ্র, গবেষণাগার, পারমাণবিক জ্বালানি নির্মাণ প্ল্যান্ট এবং একটি নতুন স্থাপনা যা সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ধাতুতে রূপান্তরের জন্য নির্মাণাধীন ছিল।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হুমকি দিয়েছেন, তেহরানের নাগরিকদের “মূল্য দিতে হবে”। তিনি বলেন, “তেহরানের অহংকারী স্বৈরশাসক এখন কাপুরুষ খুনি হয়ে গেছে। তার সিদ্ধান্তে ইসরায়েলি নাগরিকদের উপর ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হচ্ছে, যার জন্য তেহরানকে চরম মূল্য দিতে হবে।”
ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ডস দাবি করেছে, তারা এখন আরও “শক্তিশালী ও প্রাণঘাতী” হামলা চালাচ্ছে এবং ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও এই দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
তেহরান থেকে বাসিন্দাদের শহর ছাড়ার দৃশ্য দেখা গেছে। সোমবার রাতে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রে আরও আটজন ইসরায়েলি নিহত হন। পেতাহ টিকভায় একটি অ্যাপার্টমেন্টে সরাসরি আঘাতে চারজন, হাইফায় তিনজন এবং তেল আবিবের কাছে বনে ব্রাকে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।
এদিকে, ইরানে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির দায়ে অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এ নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহে তৃতীয়বারের মতো এ ধরনের ফাঁসির ঘটনা ঘটল। বিচার প্রধান ঘোষণা দিয়েছেন, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে যারা ইসরায়েলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকবে, তাদের বিচার দ্রুত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক হাকাবি জানিয়েছেন, তেল আবিবে মার্কিন দূতাবাসের আশেপাশে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে “ছোটখাটো ক্ষয়ক্ষতি” হয়েছে।
একই সময় কানাডার রকি পর্বতমালায় শুরু হয়েছে জি-৭ সম্মেলন, যেখানে ইসরায়েল-ইরান সংঘাত প্রধান আলোচ্য বিষয় হতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আমি আশাবাদী যে চুক্তি হবে। তবে অনেক সময় লড়াই করেই সমাধানে যেতে হয়।”
সাময়িকভাবে ওমানে নির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্র-ইরান আলোচনা বাতিল হয়েছে। ইরানি কর্মকর্তারা স্পষ্ট জানিয়েছেন, যুদ্ধ চলাকালীন তারা কোনো আলোচনায় বসবেন না।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে না দেওয়া, তবে একইসঙ্গে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারও নিশ্চিত করা।”
সূত্র: https://short-link.me/14IvM
মিরাজ খান