
ছবি: সংগৃহীত
টানা কয়েকদিন ধরে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে চলা হামলা-পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। দুই দেশের এ সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৫০ জন। এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে এবার তেহরানের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রতিবেশী মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান। শুধু তাই নয়, ইসরাইল পারমাণবিক হামলা চালালে জবাবে তেহরানকে পাশে থেকে পারমাণবিক প্রতিঘাতের আশ্বাস দিয়েছে ইসলামাবাদ।
গত শুক্রবার ভোরে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান শুরু করে পাল্টা আক্রমণ। কয়েক দফায় চলা এই হামলা-পাল্টা হামলায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলুশনারি গার্ড কর্পসের (IRGC) শীর্ষ কর্মকর্তা ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য জেনারেল মহসিন রেজাই এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “পাকিস্তান আমাদের আশ্বস্ত করেছে—ইসরাইল যদি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে, তাহলে তারাও ইসরাইলে পারমাণবিক জবাব দেবে।” তিনি আরও জানান, পাকিস্তান ইরানের পাশে দাঁড়িয়ে মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের ডাক দিয়েছে।
যদিও এখন পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে পারমাণবিক জবাবের ঘোষণা দেয়নি, তবে দেশটি বরাবরই ইরানের অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে এসেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এক অনলাইন পোস্টে বলেছেন, “ইসরাইলের পারমাণবিক সক্ষমতা নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। কারণ এই সংঘাত শুধু মধ্যপ্রাচ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, বিশ্বব্যাপী প্রভাব ফেলতে পারে।”
ভারতের এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানায়, পাকিস্তানের এ আশ্বাসকে সরাসরি সামরিক প্রতিশ্রুতি হিসেবে না দেখে কূটনৈতিক সমর্থন হিসেবেই ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তবে এটি মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনৈতিক সমীকরণে বড় একটি ইঙ্গিত বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইরান-ইসরাইল সংঘাত ঘিরে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দুই দেশের শান্তির আহ্বান জানালেও সতর্ক করেছেন, ইরান যদি যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা চালায়, তবে যুক্তরাষ্ট্র এমন জবাব দেবে যা ইতিহাসে আগে কখনও দেখা যায়নি।
আন্তর্জাতিক পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ সংস্থা আইসিএনএন-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের মাত্র নয়টি দেশের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে ইসরাইল ও পাকিস্তান উভয়েই রয়েছে, এবং তারা এখনও পারমাণবিক বিস্তার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি।
বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, বর্তমান পরিস্থিতি যদি আরও ঘনীভূত হয় এবং পাকিস্তান-ইরান একত্রে ইসরাইলবিরোধী অবস্থানে থেকে সামরিক প্রতিক্রিয়ায় যায়, তবে তা মধ্যপ্রাচ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে এক ভয়াবহ বৈশ্বিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে।
ছামিয়া