ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

ভিন্ন ধর্মে বিয়ের সুযোগ দেয় ‘বিশেষ বিবাহ আইন’: কীভাবে সম্পন্ন হয় এই বিয়ে?

প্রকাশিত: ০১:৪৮, ১৭ জুন ২০২৫; আপডেট: ০১:৪৯, ১৭ জুন ২০২৫

ভিন্ন ধর্মে বিয়ের সুযোগ দেয় ‘বিশেষ বিবাহ আইন’: কীভাবে সম্পন্ন হয় এই বিয়ে?

ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশে ধর্ম ভেদে বিবাহের সাধারণত নিজ নিজ ধর্মীয় রীতিতেই সম্পন্ন হয়। তবে যখন প্রেম বা পারিবারিক পছন্দ ভিন্ন ধর্মে গড়ায়, তখন একমাত্র ভরসা হয়ে ওঠে ‘বিশেষ বিবাহ আইন, ১৮৭২’। ব্রিটিশ আমলে প্রণীত এই আইন এখনো কার্যকর রয়েছে, যা নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী দুই ব্যক্তির মধ্যে বিয়ের সুযোগ করে দেয়।

কারা এই আইনে বিয়ে করতে পারবেন?

‘বিশেষ বিবাহ আইন’ অনুসারে, মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, ইহুদি, পারসি, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন— এদের কেউ যদি ধর্মান্তরিত হয়ে নিরপেক্ষ হন বা অন্য কোনো ধর্মে না থাকেন, তবে তারাই কেবল এই আইনের আওতায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন। এ ধরনের বিয়েতে প্রধান শর্ত হচ্ছে— ধর্ম ত্যাগ করা

যদি কোনো পক্ষ ধর্ম ত্যাগ না করেন, তাহলে সেই বিয়েকে এই আইনের অধীনে বৈধ ধরা হবে না। তবে মুসলিম পুরুষ যদি অন্য ধর্মের নারীকে ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী বিয়ে করেন, সেটি ইসলামিক বিয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে পারে।

কী কী শর্ত মানতে হয়?

বিশেষ বিবাহ আইনে বিয়ে সম্পন্ন করার জন্য নিচের শর্তগুলো অবশ্যই পূরণ করতে হবে:

১. বিয়ের সময় কোনো পক্ষেরই জীবিত স্বামী বা স্ত্রী থাকা চলবে না।
২. পুরুষের বয়স কমপক্ষে ২১ বছর এবং নারীর বয়স ১৮ বছর হতে হবে।
৩. রক্ত বা বৈবাহিক সম্পর্কের কোনো বাধা থাকা যাবে না।
4. বিয়ের আগেই নিকটবর্তী রেজিস্ট্রারের কাছে ১৪ দিন আগে নোটিশ দিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে কেউ আপত্তি না জানালে, বিয়েটি সম্পন্ন করা যাবে।
5. বিয়ের দিন রেজিস্ট্রারের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষকে তিনজন সাক্ষীর সামনে হলফনামায় স্বাক্ষর করতে হবে এবং এটি নোটারি পাবলিক দ্বারা নোটরাইজড করাতে হবে।
6. মিথ্যা তথ্য দিলে সেটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
7. হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন কেউ এই আইনে বিয়ে করলে তার যৌথ পরিবার থেকে আইনত বিচ্ছিন্ন বলে ধরা হয়।
8. এই আইনে বিয়ে করা দম্পতির সন্তান কোনো নির্দিষ্ট ধর্মীয় পরিচয় না পেলেও, সে নিজে পরবর্তীতে ধর্ম গ্রহণ করতে পারে।

কোথায় হয় এই বিয়ে?

বাংলাদেশে পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলীতে সরকারিভাবে এই আইনে বিয়ের একমাত্র স্বীকৃত রেজিস্ট্রার অফিস রয়েছে। যদিও অনেকেই না জেনে সরাসরি কোর্টে যান, কিন্তু বিয়েটি হয় মূলত নির্ধারিত রেজিস্ট্রার অফিসে। তবে ডিভোর্স চাইলে সেটি করতে হয় পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে। 

কী কী ডকুমেন্ট লাগে?

এই বিয়ের জন্য প্রয়োজন হবে—
✔️ দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
✔️ জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
✔️ তিনজন সাক্ষী 

বিশেষ দিক

এই আইনে বিয়ে হওয়া ব্যক্তিরা এবং তাদের সন্তানেরা অনেক সময় উত্তরাধিকার বা সম্পত্তি বণ্টনের প্রশ্নে আইনি জটিলতায় পড়েন। কেননা, ধর্ম নিরপেক্ষতা বা ধর্মত্যাগের কারণে সাধারণ উত্তরাধিকার আইন প্রয়োগে সমস্যা দেখা দেয়।

আলীম

আরো পড়ুন  

×