
ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের বিপ্লব আসতে যাচ্ছে। সরকার ঘোষণা দিয়েছে—১৯০৮ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত করা সব রেজিস্ট্রিকৃত দলিল ধাপে ধাপে অনলাইনে আপলোড করা হবে। অর্থাৎ, এক শতকেরও বেশি সময় ধরে যেসব দলিল রয়েছে, সেগুলো এখন আর শুধুই সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে থাকা বালাম বইয়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না—প্রতিটি দলিল জমা পড়বে একটি কেন্দ্রীয় ডিজিটাল ডেটাবেজে।
এই উদ্যোগের ফলে দেশের কিংবা বিদেশে থাকা মালিকরাও ঘরে বসে অনলাইনে দেখতে পাবেন তাদের জমির দলিল। সরকারের ভূমি ও আইন মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এই অটোমেশন কার্যক্রম চালু করেছে, যা ইতোমধ্যে ২১টি উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে কার্যকর হয়েছে। আগামী ২০২৫ সালের জুলাইয়ের মধ্যেই দেশের সকল সাব-রেজিস্টার অফিসে এটি চালু হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
কী করবেন জমির প্রকৃত মালিকেরা?
যাদের মূল দলিল এখনো অনলাইনে দৃশ্যমান নয়, তারা সংশ্লিষ্ট জেলা রেজিস্টার অফিসে গিয়ে নির্ধারিত ফি দিয়ে দলিলটি স্ক্যান করে আপলোড করাতে পারবেন। বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে দালালদের মাধ্যমে না করার জন্য। কারণ মূল দলিল হারিয়ে গেলে বড় বিপদে পড়তে হতে পারে।
যাদের দলিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ কিংবা অন্য কোনো কারণে নষ্ট হয়ে গেছে, কিন্তু হাতে প্রমাণস্বরূপ কপি আছে—তাদের জন্যও রয়েছে আশার কথা। যদি সেই দলিল বালাম বইয়ে রেকর্ড পাওয়া যায়, তবে সেটির ভিত্তিতে সার্টিফাইড কপি পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বিপাকে কারা?
যারা এতদিন জাল দলিল, রাজনৈতিক প্রভাব বা পেশিশক্তির বলে অন্যের সম্পত্তি দখলে রেখেছে, তাদের জন্য এ উদ্যোগ রীতিমতো দুঃস্বপ্ন। কারণ, বালাম বইয়ে যেসব দলিলের অস্তিত্ব নেই, সেসব এখন আর অনলাইনে স্থান পাবে না। জাল দলিল দিয়ে এখন আর দলিল আপলোড করানো বা দখলের বৈধতা দেখানো সম্ভব হবে না।
সার্চ করলেই দেখা যাবে তথ্য
এই অটোমেশন সিস্টেমের মাধ্যমে অনলাইনে ঢুকে আপনি জানতে পারবেন—আপনার দলিল আপলোড হয়েছে কিনা, রেজিস্ট্রি করা আছে কিনা, জমির মালিক হিসেবে আপনার নাম রয়েছে কিনা ইত্যাদি। যেকোনো সমস্যায় আপনি সরাসরি সরকারি দপ্তরে গিয়ে ফি দিয়ে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবেন।
এই উদ্যোগ শুধুমাত্র ভূমি মালিকদের সুরক্ষিত করবে না, বরং জমি সংক্রান্ত জালিয়াতি, প্রতারণা ও জবরদখলের মতো অপরাধ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সচেতন হোন, দলিল যাচাই করুন, নিজেই হোন নিজের সম্পত্তির রক্ষক।
ইমরান