
ছবিঃ সংগৃহীত
সম্প্রতি বাংলাদেশে ভূমি মালিকদের মধ্যে একটি চিন্তা ও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে, যেখানে বলা হচ্ছে যে ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে দেশের ছয় শ্রেণীর দলিল বাতিল করা হবে। অনেক ভিডিও এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে এমন দাবি করা হচ্ছে যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এমন একটি আইন প্রণয়ন করেছে। কিন্তু আসল ঘটনা কী? কোন দলিলগুলো প্রভাবিত হতে পারে? এবং কোন দলিলগুলো আপনার জন্য নিরাপদ?
ছয় শ্রেণীর দলিল বাতিল হচ্ছে – কথাটা কতটা সত্য?
এই দাবিগুলো মূলত ভুল বা অর্ধ-সত্য তথ্যে ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কোন নতুন আইন চালু করেছে যেখানে ছয় শ্রেণীর দলিল বাতিল করা হবে এমন কোন সংবাদ বা ঘোষণা এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। আসলে এ বিষয়ে উদ্বেগের কারণ হচ্ছে জমি দলিলের আইনী বৈধতা এবং কিছু অসৎ মহাজনদের অপপ্রচার।
আসলে, বাংলাদেশে আগে থেকেই এমন কিছু নিয়ম রয়েছে যা দলিলের বৈধতা নির্ধারণ করে। যদি কোন দলিল সঠিকভাবে তৈরি এবং সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্টার করা হয়ে থাকে, তবে তা বাতিল হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
কোন ধরনের দলিলগুলো বাতিল হতে পারে?
-
অরেজিস্টারড/আনস্ট্যাম্পড দলিল:
-
অনেকে স্ট্যাম্প কাগজে দলিল লিখে রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই মনে করেন যে তা বৈধ।
-
কিন্তু বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, যতক্ষণ না সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দলিলটি রেজিস্টার করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তা আইনীভাবে বৈধ হয় না।
-
২০২৩ সালে পাশ করা "ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন" অনুযায়ী, এধরনের দলিল কোন আইনী স্বীকৃতি পায় না।
-
-
ভুয়া/জাল দলিল:
-
কিছু দলিল প্রকৃত মালিকের অজ্ঞাতসারে তৈরি করা হয়েছে।
-
এধরনের দলিল বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যদি প্রকৃত মালিক আদালতে মামলা করে প্রমাণ করতে পারেন যে তাঁর জমি অন্যের নামে জাল দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয়েছে।
-
-
অসম্পূর্ণ বা ভুল দলিল:
-
যেসব দলিলে প্রয়োজনীয় তথ্য (যেমন- মৌজা নম্বর, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর, চৌহদ্দি ইত্যাদি) অসম্পূর্ণ বা ভুল আছে, সেগুলো পরবর্তীতে আদালতে অকার্যকর ঘোষিত হতে পারে।
-
-
খাইস জমির দলিল:
-
খাইস জমি সরকারের সম্পত্তি হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এগুলো বিক্রি করা যায় না।
-
এধরনের জমির দলিল যদি কেউ করে থাকে, তা অবৈধ হিসেবে ঘোষিত হতে পারে।
-
-
ভুয়া হেবা দলিল:
-
হেবা দলিল বৈধ হতে হলে ইসলামী আইনের নির্দিষ্ট শর্ত মেনে তৈরি করতে হয়।
-
যদি হেবা দলিল আইন মেনে না করা হয়, তবে এটি আদালতে বাতিল হতে পারে।
-
-
রেকর্ড ভিত্তিক দলিল:
-
কিছু ক্ষেত্রে মালিকানা রেকর্ড ভিত্তিতে দেওয়া হয় কিন্তু প্রকৃত মালিকের কোন আইনী দলিল নেই।
-
এধরনের দলিল প্রকৃত মালিক যদি আদালতে মামলা করেন, তবে বাতিল হতে পারে।
-
আপনার দলিল কি নিরাপদ?
আপনি যদি নিম্নলিখিত শর্তগুলো মেনে দলিল করে থাকেন, তবে আপনার দলিল কখনো বাতিল হবে না:
-
দলিলটি সাব-রেজিস্টার অফিসে রেজিস্টার করা হয়েছে।
-
দলিলে সঠিকভাবে মৌজা, খতিয়ান, দাগ নম্বর, চৌহদ্দি এবং মালিকানার ধারাবাহিকতা উল্লেখ করা হয়েছে।
-
দলিলে ক্রেতা ও বিক্রেতার স্পষ্ট স্বাক্ষর রয়েছে।
-
দলিলটি আইনীভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প ডিউটি প্রদান করা হয়েছে।
সরকারের নতুন পদক্ষেপ: অনলাইন দলিল রেজিস্ট্রেশন
বাংলাদেশ সরকার গত কয়েক বছর ধরে ভূমি দলিলের অনলাইন রেজিস্ট্রেশন এবং স্ক্যানিং প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ১৯০৮ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত সমস্ত দলিল ডিজিটালাইজ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে দলিলের বৈধতা যাচাই করা সহজ হয়েছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র রেজিস্টারকৃত দলিলগুলোই অন্তর্ভুক্ত হবে।
সাবধানতা অবলম্বন:
-
কখনো রেজিস্ট্রেশনবিহীন দলিল করবেন না।
-
জমি কেনার আগে দলিল পরীক্ষা করে নিন এবং একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করুন।
-
অনলাইনে দলিলের বৈধতা যাচাই করুন http://www.land.gov.bd
সংক্ষেপে:
২০২৫ এর জুন মাসের মধ্যে ছয় শ্রেণীর দলিল বাতিল হবে — এ ধরনের কোন আইন পাশ হয়নি। যেসব দলিল আইনী পদ্ধতিতে তৈরি এবং রেজিস্টার করা হয়েছে, তা কখনো বাতিল হবে না। তবে যেসব দলিল ভুয়া, অসম্পূর্ণ বা অরেজিস্টারড তা আদালতে বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুতরাং, আপনি যদি সঠিকভাবে দলিল রেজিস্টার করে থাকেন, তাহলে চিন্তা করার কোন কারণ নেই। আপনার জমির মালিকানা আইনের আশ্রয়ে সুরক্ষিত।
ইমরান