
ছবিঃ সংগৃহীত
বর্তমান সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক একটি সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তালাক সংক্রান্ত আইন ও অধিকার সম্পর্কে এখনও অনেকের পরিষ্কার ধারণা নেই। বিশেষ করে যখন স্ত্রী নিজেই ডিভোর্স দিতে চান, তখন অনেকেই জানতে চান— এমন পরিস্থিতিতে তিনি স্বামীর কাছ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ বা ভরণপোষণ পেতে পারেন কি না। চলুন জেনে নিই এ বিষয়ে বাংলাদেশের আইন কী বলে।
স্ত্রীর তালাক দেওয়ার অধিকার
বাংলাদেশে মুসলিম ব্যক্তিগত আইন অনুযায়ী, ১৯৬১ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক আইন এবং মুসলিম পারিবারিক অধ্যাদেশ অনুযায়ী, যদি স্ত্রীর নিকাহনামায় ‘তালাক দেওয়ার অধিকার’ (delegated power of divorce) থাকে, তবে তিনি নিজে তালাক দিতে পারেন। কিন্তু যদি এমন কোনো অধিকার না থাকে, তাহলে তাকে আদালতের মাধ্যমে বিচ্ছেদ নিতে হয়, যা ‘ফারাক’ নামে পরিচিত।
ভরণপোষণ ও ক্ষতিপূরণ: কী বলছে আইন?
যদি স্ত্রী নিজে তালাক দেন এবং তাদের সন্তানের দায়িত্ব থাকে, তাহলে তিনি সন্তানের ভরণপোষণ দাবি করতে পারেন। তবে তিনি স্বামী থেকে ব্যক্তিগত ক্ষতিপূরণ বা আর্থিক সহায়তা পাবেন কি না, তা নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপর।
সাধারণভাবে, স্ত্রী নিজেই তালাক দিলে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আইনগত সুযোগ সীমিত। তবে ব্যতিক্রম রয়েছে।
ব্যতিক্রম: নির্যাতন বা অবহেলা প্রমাণিত হলে
আইনজীবী ব্যারিস্টার ফারজানা হক বলেন, “স্ত্রী যদি স্বামীর নির্যাতন, অবহেলা বা প্রতারণার শিকার হয়ে ডিভোর্স দিতে বাধ্য হন, তাহলে তিনি ক্ষতিপূরণের জন্য ফৌজদারি কিংবা দেওয়ানি আদালতে মামলা করতে পারেন।”
বাংলাদেশ হাইকোর্টও কয়েকটি মামলায় স্বামীর অবহেলা ও নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়ার পর স্ত্রীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এসব ক্ষেত্রেই মূল বিষয় হলো— যথাযথ প্রমাণ ও তথ্য উপস্থাপন।
আইনগত পরামর্শ অপরিহার্য
ডিভোর্স একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হলেও, এর রয়েছে গভীর সামাজিক ও আইনগত প্রভাব। তাই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে উভয়পক্ষেরই উচিত অভিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া এবং নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখা।
স্ত্রী নিজে তালাক দিলে ক্ষতিপূরণ বা আর্থিক সহায়তা পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই, তবে নির্যাতন বা অবহেলার মতো গুরুতর কারণ প্রমাণিত হলে আইনি পথে ক্ষতিপূরণ চাওয়া সম্ভব। তাই তালাকের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে আবেগ নয়, বরং সচেতন সিদ্ধান্তই হতে পারে সর্বোত্তম পথ।
আলীম