
ছবিঃ সংগৃহীত
বাংলাদেশের শতবর্ষের পুরনো জমি-সংক্রান্ত বিচার ব্যবস্থায় এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। জমির মালিকানা, বেদখল ও জবরদখল নিয়ে সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ দূর করতে রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে একটি নতুন অধ্যাদেশ জারি করেছে সরকার, যা ইতোমধ্যে দেশের আদালতগুলোতে কার্যকর হয়েছে।
নতুন আইনের আওতায়, জমির বেদখল অবস্থায় থাকা মালিকরা এখন সহজেই আদালতের শরণাপন্ন হয়ে জমি ফেরত পেতে পারবেন। আগের মতো দীর্ঘসুত্রতা, সাক্ষী হাজির, একাধিক মামলা, বা সমনের ঝামেলায় আর পড়তে হবে না। নতুন ব্যবস্থায় বিচার কার্যক্রম হবে স্বচ্ছ, ডিজিটাল এবং দ্রুতগতির।
বিচার ব্যবস্থায় মূল পরিবর্তনগুলো হলো:
🔹 সাক্ষ্য গ্রহণের নতুন পদ্ধতি:
সাক্ষী এখন আর মৌখিকভাবে আদালতে উপস্থিত হয়ে জবানবন্দি দিতে বাধ্য নন। মামলার বাদী বা আইনজীবী লিখিতভাবে সাক্ষ্যের বিবরণ অ্যাফিডেভিট আকারে আদালতে জমা দিতে পারবেন। কেবল প্রয়োজনে আদালতের নির্দেশে সাক্ষীকে হাজির করে জেরা করা যাবে।
🔹 সমন পাঠানো হবে ডিজিটালি:
আগে যেখানে ডাকযোগ বা হাতে হাতে সমন পাঠাতে হতো, এখন তা মোবাইল এসএমএস, ইমেইল বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো যাবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সমন গ্রহণ করেছে কিনা, তা আদালতের সন্তুষ্টির ভিত্তিতে বিবেচিত হবে।
🔹 মামলার সময় কমানো হয়েছে:
পক্ষগুলো আগে অসংখ্যবার সময় প্রার্থনা করতে পারলেও এখন সর্বোচ্চ দুই থেকে চারবার টাইম পিটিশন নেওয়ার সুযোগ থাকবে। এরপর আদালত সরাসরি শুনানি সম্পন্ন করে রায় দিতে পারবেন।
🔹 এক মামলাতেই মিলবে জমির দখল:
আগে জমির মালিক আদালতের রায় পাওয়ার পরও ‘ডিক্রিজারি’ নামে আলাদা মামলা করতে হতো জমির দখল বুঝে পাওয়ার জন্য। এখন থেকে রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই আদালত প্রশাসন ও পুলিশের সহযোগিতায় জমি বুঝিয়ে দিতে পারবেন। এর জন্য আর আলাদা মামলা করার প্রয়োজন হবে না।
🔹 ভুয়া দলিল দাখিলে কঠোর শাস্তির বিধান:
যদি কোনো পক্ষ জাল দলিল, জাল প্রমাণ বা ভুয়া তথ্য আদালতে উপস্থাপন করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইনজীবী ও সাধারণ মানুষ বলছেন, বিচার ব্যবস্থার এমন যুগোপযোগী সংস্কার দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। এ ব্যবস্থা কার্যকর হলে জমির মালিকদের হয়রানি, অর্থনৈতিক চাপ ও বছরের পর বছর ধরে চলা মামলার ভোগান্তি অনেকটাই কমে আসবে।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, জমি-সংক্রান্ত মামলাগুলো এখন থেকে আরও দ্রুত নিষ্পত্তি হবে এবং ভোগ দখল নিশ্চিত করার জন্য আদালতের একক সিদ্ধান্তই যথেষ্ট হবে।
এ আইন অনুযায়ী, জমির মালিককে অবশ্যই তার বৈধ কাগজপত্র যেমন খতিয়ান, দলিল, নামজারি, ভোগ দখলের প্রমাণ ইত্যাদি সঙ্গে নিয়ে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে মামলা করতে হবে।
এখন থেকে যারা বেদখল জমি নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন, তারা সহজেই ন্যায়বিচার এবং ভোগ দখল ফিরে পাওয়ার সুযোগ পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মারিয়া