ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

৪০ বছর ধরে টাটকা ইলিশের টানে ছুটে আসেন ক্রেতারা

সালাহউদ্দিন সালমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ১৬ জুন ২০২৫

৪০ বছর ধরে টাটকা ইলিশের টানে ছুটে আসেন ক্রেতারা

ছবিঃ সংগৃহীত

পদ্মার পাড় ঘেঁষে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মেদিনীমণ্ডল ইউনিয়নের পুরনো মাওয়া ঘাট যেন প্রতিদিন ভোরে রূপ নেয় এক প্রাণবন্ত মৎস্য মিলনমেলায়। এখানেই অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ‘মাওয়া মৎস্য আড়ত’, যা শুধুমাত্র মুন্সীগঞ্জবাসীর নয়, বরং রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের নানা প্রান্তের ভোজনরসিকদের প্রতিদিন ভোরে আকর্ষণ করে।

মাওয়া মৎস্য আড়ত: ৪০ বছরের ঐতিহ্যে আজও টাটকা মাছের খোঁজে ছুটে আসে ক্রেতা, কিন্তু অর্জিনিয়াল ইলিশ ক্রয় নিয়ে ঢাকা সহ অন্যান্য জায়গা থেকে আসা ক্রেতাদের সাথে চলে প্রতারণাও।

মাওয়া মাছের আড়ত—এটি শুধু একটি বাজার নয়, বরং মুন্সীগঞ্জ জেলার এক অনন্য ঐতিহ্য। দক্ষিণাঞ্চলের শত শত জেলে সারারাত নদীপথে মাছ ধরে এখানে নিয়ে আসে। ভোর ৫টা বাজার শুরু হওয়ামাত্রই শুরু হয় হালচাল, হাঁকডাক আর দরদাম। সকাল ৮টার মধ্যেই বিকিকিনি শেষ—ততক্ষণে কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়ে যায় এই বাজারে।

এই বাজারের মূল আকর্ষণ পদ্মার আসল টাটকা ইলিশ। ক্রেতারা নিজের চোখে দেখে ইলিশ পছন্দ করেন, দরদাম করেন এবং কেউ কেউ এখানেই ভেজে খাওয়ার ব্যবস্থাও করেন। জেলেদের কাছ থেকে সরাসরি মাছ কিনে নেওয়ার ফলে এখানে প্রতারণার সুযোগ কম থাকে। ফলে এখানকার ইলিশ খাঁটি এবং স্বাদের দিক থেকেও অতুলনীয়।

প্রতিদিন সকালবেলা এই বাজারে ছুটে আসেন রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ। কেউ খান মাছ, কেউ সাথে করে নিয়ে যান। যারা আসল ইলিশের স্বাদ চান, তারা বলেন—“মাওয়া আড়তের মতো টাটকা ইলিশ আর কোথাও পাওয়া যায় না।” অনেকেই জানান, এ বাজারে গেলে বোঝা যায় ইলিশ কেন আমাদের জাতীয় মাছ।

এই আড়তের সাথে জড়িয়ে রয়েছে বহু বছরের ইতিহাস ও স্থানীয় অনেক গুণী ব্যবসায়ীর অবদান। আড়তের ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দীর্ঘদিন এই বাজারে ব্যবসা করেছি। এখানকার ঐতিহ্য ও টাটকা মাছের জন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকে ক্রেতারা ছুটে আসতেন, এখনো আসেন। সত্যিকারের ইলিশপ্রেমীরা জানেন, কোথায় খাঁটি ইলিশ পাওয়া যায়।”

ঢাকা থেকে আসা ক্রেতা শেখ শরিফ জানান- আমরা ৭ বন্ধু মিলে মাছ কিনতে এসেছি কয়েক হাজার টাকার মাছ কিনেছি।তবে সাবধান এই বাজারে ২৫ / ৩০ টা মাছের মোকামে অনেকেই ইলিশের নামে চন্দনা মাছ বিক্রি করে থাকেন।

সরেজমিনে বাজার ঘুরে জানাযায়। এই ঐতিহ্যবাহী বাজারেও এখন ভর করেছে প্রতারণার ছায়া। বিশেষ করে ইলিশ মাছ নিয়ে চলছে ভয়াবহ জালিয়াতি। চাহিদা বেশি, দামও চড়া—এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনেক ব্যবসায়ী ইলিশের নামে সামুদ্রিক মাছ যেমন চন্দনা, সার্ডিন বা চৌক্কা বিক্রি করছেন। আর সাধারণ ক্রেতা ঠকছেন ইলিশের স্বাদ পাওয়ার আশায়।

ভোরের কুয়াশা, নদীর গর্জন আর মাছের হাঁকডাকে যারা একবার এই বাজারে এসেছেন, তারা সহজে ভুলতে পারেন না সেই অভিজ্ঞতা। শুধু মাছ কেনা নয়, এই বাজারে এলে ইলিশের প্রতি বাঙালির আবেগ, ঐতিহ্য এবং খাদ্যসংস্কৃতির মেলবন্ধনটা গভীরভাবে টের পাওয়া যায়।

মাওয়া মৎস্য আড়ত শুধু একটি বাজার নয়—এটি মুন্সীগঞ্জের গর্ব, একটি ঐতিহ্য, একটি ভোরের গল্প। তাই ইলিশের টানে যারা ছুটে আসেন, তারা শুধু মাছ নয়—খাঁটি বাঙালিয়ানা ও স্বাদে পরিপূর্ণ এক অভিজ্ঞতা নিয়েই ফেরেন।
 

আলীম

×