
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনা যখন ছড়িয়ে পড়ছে আঞ্চলিক অস্থিরতায়, তখন যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণ এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিলেন সিনেটর টিম কেইন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেন কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করতে না পারেন, সে লক্ষ্যে সোমবার একটি নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন ভার্জিনিয়ার এই ডেমোক্র্যাট নেতা।
সিনেটর কেইন বলেন, "আমাদের সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা কেবল কংগ্রেসের। ইরানের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার আগে অবশ্যই সেই অনুমোদন থাকতে হবে।" তিনি সতর্ক করে বলেন, “ইসরায়েল-ইরানের বর্তমান শত্রুতা দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্রকে আরেকটি অন্তহীন যুদ্ধে টেনে নিতে পারে, যা আমাদের জাতীয় স্বার্থে মোটেই কাম্য নয়।”
যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢালছেন ট্রাম্প?
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে কেইন একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা কংগ্রেসে পাস হলেও শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের ভেটোতে তা কার্যকর হয়নি। এবারও তার লক্ষ্য প্রেসিডেন্টের একক সিদ্ধান্তে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা রুখে দেওয়া।
বর্তমানে ইসরায়েল একাধিকবার ইরানের ওপর বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, এসব হামলা ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ধ্বংসে চালানো হয়েছে। পাল্টা জবাবে ইরানও ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। দুই দেশের এই যুদ্ধাবস্থা ইতোমধ্যে বহু বেসামরিক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, আহত হয়েছে শত শত মানুষ।
এমন প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প একদিকে ইসরায়েলের আক্রমণকে সমর্থন জানাচ্ছেন, অন্যদিকে দাবি করছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে সরাসরি জড়িত নয়। তবে তেহরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রকে টার্গেট করলে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে।”
"চুক্তির সময় এসেছে", বলছেন ট্রাম্প
রবিবার কানাডার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার আগে ট্রাম্প বলেন, “আমি আশা করি একটা চুক্তি হবে। আমার মনে হয়, এখনই সঠিক সময়। তবে কখনও কখনও দুই পক্ষকে যুদ্ধ করে নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করে নিতে হয়।”
বিশ্বনেতারা যখন কানাডায় জড়ো হয়ে সংঘাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্রে সিনেটর কেইনের এই পদক্ষেপ কূটনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
হোয়াইট হাউস বনাম কংগ্রেস: যুদ্ধ ক্ষমতার লড়াই
মার্কিন আইনে ‘ওয়ার পাওয়ার রেজোলিউশন’ একটি বিশেষ গুরুত্ববাহী প্রক্রিয়া। এটি সংসদে উত্থাপিত হলে তা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোচনার জন্য বিবেচিত হয়। ফলে সিনেট এই প্রস্তাব নিয়ে দ্রুতই আলোচনায় বসবে এবং সিদ্ধান্ত নিতে হবে—ট্রাম্পের হাতে যুদ্ধ ঘোষণার চাবিকাঠি থাকবে, নাকি তা ফিরিয়ে দেওয়া হবে কংগ্রেসের হাতে।
বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো ভূমিকা বৈশ্বিক রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। এই প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে মার্কিন রাজনীতিতে কংগ্রেস বনাম হোয়াইট হাউসের যুদ্ধক্ষমতার দ্বন্দ্ব নতুন করে সামনে উঠে এসেছে।
Mily