
.
এমনিতেই বাংলাদেশের পোশাক শিল্প স্থানীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কারোপ, উচ্চ ব্যাংক সুদ ও মূল্যস্ফীতিসহ নানা কারণে নিষ্পেষিত দেশের প্রধান রপ্তানি খাত। এর মধ্যে ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ শুরু হওয়ায় তা পোশাক খাতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বলে মনে করেন তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র নব নির্বাচিত সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু। সোমবার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে বিজিএমইএর নবনির্বাচিত কমিটির দায়িত্ব গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে নতুন সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু’র হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন বিজিএমইএ’র প্রশাসক আনোয়ার হোসেন।
বিজিএমইএ’র নতুন সভাপতি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে পাল্টা শুল্কারোপ, ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল, উচ্চ ব্যাংক সুদ ও মূল্যস্ফীতি, দূর্বল অবকাঠামো, মজুরি বৃদ্ধি এবং জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধির চাপে অনেকটা নিষ্পেষিত পোশাক খাত। এরমধ্যে ইরান-ইসরাইল যুদ্ধকে দেশের পোশাক খাতের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নোত্তরে বলেছিলাম, পোশাক খাতের চ্যালেঞ্জ সবসময় পরিবর্তন হয়। এখন ইরান-ইসরাইল যুদ্ধে যদি জ্বালানি তেলের সংকট তৈরি হয় তা দেশের পোশাক খাতকে প্রভাবিত করবে। এমন পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে অনেক কাজ করতে হবে জানিয়ে সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা চান তিনি। মাহমুদ হাসান খান বলেন, নির্বাচনের সময় আমরা অনেকগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। পোশাক শিল্পের জন্যে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠন করার জন্য কাজ করা। এসএমই ও নন বন্ডেন্ড পোশাক কারখানাকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া। কাস্টমস ও ভ্যাট নিয়ে কাজ করব। এলডিসি উত্তরণের প্রভাব নিয়ে আমরা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করব, যেন সঠিক সময়ে এলডিসি উত্তরণ ঘটে। মার্কিন শুল্ক নিয়ে কাজ চলছে। এটি যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে, পারস্পরিক শুল্ক যেন আমাদের ওপর আরোপ না হয় সেটি নিয়ে কাজ করব। এক্সিট পলিসি নিয়ে কাজ করব, আমরা প্রকৃত এক্সিট পলিসি তৈরি করতে চাই। এর বাইরেও আমাদের অনেকগুলো প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন বোর্ডের অন্যতম এজেন্ডা হচ্ছে একটি কার্যকর ও জবাবদিহিতামূলক বিজিএমইএ গড়ে তোলা। বিজিএমইএ যাতে একটি সার্ভিস ওরিয়েন্টেড প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। এই বোর্ড একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করবে; যেখানে আবেদন, অভিযোগ ও তথ্য জমা দেওয়া যাবে। আমরা সব সময় বলি কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস কমাতে হবে এবং আমরা বারবার সরকারের কাছে আবেদন করি। বিজিএমইএ’র সদস্যদের যাবতীয় সার্ভিস চার্জ পহেলা জুলাই থেকে ২৫ শতাংশ কমানো হবে।
বিজিএমইএ’কে একটি পরিবার উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, দেশের পোশাক শিল্পকে বহির্বিশ্বে আমরা আরও উজ্জ্বল করতে চাই। নির্বাচনের আগে আমরা ফোরাম, সম্মিলিত পরিষদ বা ঐক্য পরিষদ ছিলাম। নির্বাচনের পর আমরা এখন সবাই বিজিএমইএ পরিবার। এখান আর ফোরাম নেই, সম্মিলিত পরিষদ নেই, সবাই পোশাক শিল্প পরিবার। আমরা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে চাই।
অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ প্রশাসক বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজনের। ভবিষ্যতে বিজিএমইএ ও দেশের পোশাক শিল্প আরও উজ্জ্বল হবে সেটিই আমার প্রত্যাশা। আমি এখানে এসেছিলাম একজন সরকারি চাকরিজীবী হিসাবে, আর এখন দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে আমি ফিরছি আপনাদের সহযাত্রী হিসাবে।
অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতিদের মধ্যে বক্তব্য দেন রফিকুল ইসলাম, ফারুক হাসান, সভাপতি রুবানা হক, এস এম ফজলুল হক, কাজী মনিরুজ্জামান ও আনিসুর রহমান সিনহা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে নবনির্বাচিত কমিটির ৩৫ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সম্মিলিত পরিষদের পক্ষ থেকে, ফোরাম থেকে নির্বাচিত বিজিএমইএ’র নতুন সভাপতিকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়। এছাড়া দেশের নিটওয়্যার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকে বিজিএমইএ’র নতুন কমিটির সকল সদস্যকে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করা হয়।
প্যানেল