ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

দেশের মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে—কখন তারা ভোট দেবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:১৯, ১৬ জুন ২০২৫

দেশের মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে—কখন তারা ভোট দেবে

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষকে যদি কেউ বলে যে, তুমি কি পোলাও-কোরমা চাও, না কি তুমি ভোট দিতে চাও? তখন বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু বলবে, আমি ভোট দিতে চাই। না খেয়ে থাকলেও অসুবিধা নেই। এটা (ভোট) বাংলাদেশের মানুষের রক্তের ভেতরে মিশে আছে। তারা উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষায় আছে।

সোমবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক। বিএনপি প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটি ও চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ও চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক বিশেষ সহযোগী উপদেষ্টা কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ।

বৈঠকের পর ড. আবদুল মঈন খান জানান, সারাহ কুকের সঙ্গে দেশের চলমান অবস্থা, রাজনীতি, শিক্ষা, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতাসহ সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং আগামীতে বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চান, সে বিষয়ে প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেছেন।

নির্বাচন নিয়ে কী কথা হয়েছে?
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের যে ইচ্ছার প্রতিফলন, সেটাই তারা দেখতে চান। নতুন প্রজন্ম যারা দীর্ঘ ১৭ বছর ভোট দিতে পারেনি, বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ ভোট দিতে চায়। কাজেই ভোটের ব্যাপারে যখন নিশ্চিত কোনো ইঙ্গিত সরকারের পক্ষ থেকে আসে, যখন বলা হয় নির্বাচন কমিশন দেশবাসীকে ভোটের তারিখ জানাবে, তখন বাংলাদেশের মানুষ উচ্ছ্বসিত হয়ে যায়। আমি খোলাখুলি বলছি, আমি তো আমার গ্রামে ছিলাম—আমি দেখেছি মানুষের উচ্ছ্বাস। আমার মনে হয়, সারা বাংলাদেশেই সেটাই ছিল বটে। বাংলাদেশের মানুষ ভোট দিতে চায় উৎসবমুখর পরিবেশে।

আমরা যখন ১৪ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন করি, বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভোটের দিনটি ঠিক সে রকম একটি উৎসব। কাজেই তারা উন্মুখ হয়ে আছে—কখন ভোট দেবে, কখন তাদের মৌলিক অধিকার প্রয়োগ করবে, সত্যিকার অর্থে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে। এটাই আলোচনার বিষয়। আলোচনা করেছি, ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ যখন পুরোপুরি ফিরে আসবে, তখন একটি গণতান্ত্রিক সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে। তখন যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমরা ভবিষ্যতে কোন কোন বিষয়ে ও কার্যক্রম উন্নত করতে পারি, জোরদার করতে পারি—সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

নির্বাচনের তারিখ নিয়ে আপনাদের কোনো দাবি থাকবে কিনা?
জানতে চাইলে বিএনপির এই প্রবীণ নেতা বলেন, এগুলো দাবির বিষয় নয়। মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, বাংলাদেশের একটা প্যারাডাইম হয়ে গেছে—দাবি করবে, দাবি মানবে। এই চক্র থেকে বাংলাদেশকে বেরিয়ে আসতে হবে। দাবি-দাওয়া নয়, বরং একটা রিকনসিলিয়েটরি অ্যাপ্রোচ, পারস্পরিক সমঝোতার মানসিকতা দরকার। আমার মনে হয়, আমাদের সেই জায়গায় ফিরে যেতে হবে।

এই যে সারাক্ষণ কনফ্লিক্ট—ওর বিরুদ্ধে, এটার বিরুদ্ধে—এই পরিবেশ, এই চক্র থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনতে হবে। ১৩ই জুন একটি মিটিং হয়েছে। এটা অবাক করার মতো বিষয়—আমি ড. ইউনূস সাহেবের সঙ্গে দেখা করে বলেছি, আপনি শুধু নির্বাচনের দিনটি ঘোষণা দেন, দেখবেন বাংলাদেশের সব সমস্যা একদিনেই দূর হয়ে যাবে। ১৩ জুনের পর থেকে বাংলাদেশে একটা গুণগত পরিবর্তন হয়েছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই—যে যা-ই বলুক। মানুষ এখন উৎসাহী, সামনের দিকে তাকাচ্ছে। চিন্তা করছে—দেশে আবার গণতন্ত্র ফিরে আসবে।

এই গণতন্ত্রের জন্যই তো বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছিল। আমাদের গণতন্ত্র প্রয়োজন এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন করতে হবে, শক্তিশালী করতে হবে—যাতে মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে।

আপনারাই তো বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনেক বেশি শক্তিশালী। তার ক্ষমতা কমাতে হবে। এর মূলেই রয়েছে জবাবদিহিতা। জবাবদিহিতা না থাকলেই তো প্রধানমন্ত্রী অতি শক্তিশালী হয়ে যান। তখন যা খুশি তাই করেন। যদি সত্যিকার অর্থে জবাবদিহিতা থাকতো, তাহলে প্রধানমন্ত্রী এভাবে থাকতেন না।

মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা নিয়ে ড. মঈন খান বলেন, এটার উদ্ভব কিন্তু গাজা উপত্যকা থেকেই। কাজেই এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে যে সার্বিক বিশ্ব একটি অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে—এটা কোনো সুস্থ পরিবেশ নয়। ইরান এবং ইসরায়েলের সর্বশেষ যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে—আমাদের একটাই কথা, আমরা শান্তিময় পরিবেশ দেখতে চাই।

এখানে কনফ্লিক্টে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ মানুষ। উপকৃত হয় কারা? যারা সমরাস্ত্র বানায়, ড্রোন বানায়—এই ব্যবসায়ী কমিউনিটি। তারা চায় যুদ্ধ হোক, অস্ত্র বিক্রি হোক। কিন্তু ক্ষতিটা কার? নিরীহ সাধারণ মানুষের। কাজেই এই দ্বন্দ্ব, এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে আমরা একটি শান্তিময় বিশ্ব দেখতে চাই।

সানজানা

আরো পড়ুন  

×