
ছবি: সংগৃহীত।
বিয়ে পরবর্তী বিচ্ছেদের সময় শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীর দেওয়া আসবাবপত্র, অলঙ্কার কিংবা স্বামীর দেওয়া উপহারসামগ্রী নিয়ে দেখা দেয় আইনি ও পারিবারিক জটিলতা। কে কোন জিনিস ফেরত পাবেন, কীভাবে সেই দাবি আদায় করবেন—এই প্রশ্নে বিভ্রান্তির সুযোগে অনেক সময়ই তৈরি হয় মিথ্যা মামলা, চলে হয়রানি। অথচ এ বিষয়ে রয়েছে স্পষ্ট আইনগত দিকনির্দেশনা।
বিশেষজ্ঞ আইনজীবীদের মতে, যদি কোনো স্ত্রী তার স্বামীকে বিয়ের সময় আসবাবপত্র, স্বর্ণালঙ্কার বা নগদ অর্থ দিয়ে থাকেন এবং সম্পর্কচ্ছেদের পর সেগুলো ফেরত চান, অথবা স্বামী যদি তার স্ত্রীকে উপহার দেওয়া সামগ্রী ফেরত চান, তাহলে একমাত্র বৈধ পথ হচ্ছে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স অ্যাক্ট অনুযায়ী আদালতে মামলা করা।
আইনজীবীরা জানান, এই আইনের অধীনে বৈবাহিক সম্পর্ক চলাকালে পারিবারিক বন্ধনে উপহার দেওয়া সামগ্রী—যেগুলো কোনো লিখিত দেনমোহরের অন্তর্ভুক্ত নয়—সেগুলোর ফেরত চাওয়া সম্ভব। তবে এই দাবি আদায়ের জন্য প্রয়োজন যথাযথ ডকুমেন্টেশন বা প্রমাণপত্র। যেমন: উপহারের সময় তোলা ছবি বা ভিডিও, অডিও কল বা মেসেজের রেকর্ড, কেনাকাটার রশিদ বা চালান, প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য।
যদি এই তথ্য-প্রমাণ আদালতের সামনে উপস্থাপন করা সম্ভব হয় এবং প্রমাণিত হয় যে ওইসব সামগ্রী ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছিল—তাহলে আদালত তা ফেরতের নির্দেশ দিতে পারেন।
তবে দেনমোহর বাবদ দেওয়া সম্পদ, যেমন অলঙ্কার বা নগদ অর্থ, আদালতের মাধ্যমে ফেরত আনার সুযোগ নেই, কারণ তা ইসলামী পারিবারিক আইন অনুযায়ী স্ত্রী’র স্থায়ী অধিকার হিসেবে বিবেচিত হয়।
অনেক সময় দেখা যায়, মিথ্যা যৌতুক মামলা দিয়ে উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হন। পক্ষান্তরে, পারিবারিক সহিংসতা আইন অনুযায়ী আইনগতভাবে দাবি উপস্থাপন করলে নির্ভরযোগ্য প্রমাণ সাপেক্ষে অনেকটাই সহজে ফেরত পাওয়া সম্ভব হয়।
আইনজীবীদের পরামর্শ, কোনো প্রকার আবেগে বা সামাজিক চাপের মুখে না পড়ে বিয়ের সময় দেওয়া উপহারসামগ্রী সংক্রান্ত লেনদেনের যথাযথ প্রমাণ সংরক্ষণ করা উচিত। আর বিচ্ছেদের পরপরই যদি সেই সম্পদ ফেরত চাওয়া হয়, তাহলে মিথ্যা মামলা নয়, আইনের সহায়তায় ন্যায়সংগত পথেই সমাধান খোঁজা উচিত।
মিরাজ খান