
ছবি: প্রতীকী
নগরজীবনে বাড়িভাড়া নিয়ে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে বিরোধ যেন এক চিরচেনা সমস্যার নাম। বাড়িভাড়ার বেআইনি বাড়তি চাহিদা, বাসার ভেতরের ত্রুটি মেরামতে গাফিলতি কিংবা চুক্তির অনুপস্থিতি—এসব নানা কারণে প্রতিনিয়তই অসংখ্য পরিবার ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
সম্প্রতি একটি ভিডিও আলোচনায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার লিমা আঞ্জুমান এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘প্রায়ই দেখা যায় বাড়িওয়ালা বছরে বছরে ভাড়া বাড়াতে চান, অথচ বাসার ভেতরে নষ্ট কিছু ঠিক করাতে আগ্রহ দেখান না। অনেক ভাড়াটিয়া শুধু মৌখিক সমঝোতার ভিত্তিতে বাসা ভাড়া নেন, ফলে পরবর্তীতে সমস্যার সময় তাদের পক্ষে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।’
লিখিত চুক্তির গুরুত্ব
ব্যারিস্টার লিমা বলেন, “বাসাভাড়া কম হোক বা বেশি, যেকোনো পরিস্থিতিতে একটি লিখিত চুক্তি আবশ্যক। এটি ৩০০, ৫০০ কিংবা ৮০০ টাকার স্ট্যাম্পে করা যেতে পারে। চুক্তিতে ভাড়ার পরিমাণ, মেরামতের দায়িত্ব, উচ্ছেদের নিয়মাবলি—সবকিছুই স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকা জরুরি।’
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনে স্পষ্টভাবে বলা আছে, কোনো বাড়িওয়ালা দুই বছরের মধ্যে ভাড়া বাড়াতে পারবেন না এবং এক ধাপে ৫০০ টাকার বেশি ভাড়া বাড়ানো যাবে না। কিন্তু বাস্তবে এই আইন প্রায় উপেক্ষিত।
উভয় পক্ষের জন্যই সুরক্ষা চুক্তিতে
চুক্তি না থাকলে কেবল ভাড়াটিয়াই নয়, বাড়িওয়ালাও ক্ষতিগ্রস্ত হন বলে জানান ব্যারিস্টার লিমা। তার ভাষায়, ‘ভাড়াটিয়ার সঙ্গে সমস্যার ক্ষেত্রে যথাযথ নোটিশ দিয়ে উচ্ছেদ করতে গেলে চুক্তি না থাকলে তা অনেক সময় পুলিশের সহায়তা কিংবা আদালতের আশ্রয় নেওয়া পর্যন্ত গড়ায়।’
তিনি বলেন, ‘চুক্তিতে উল্লেখ থাকা উচিত, যদি বাসার ভেতরে কিছু ভেঙে যায়, তা কার দায়ে মেরামত হবে। এমনকি বাড়িওয়ালা মেরামতের সময় না পেলে ভাড়াটিয়া নিজে ঠিক করে সেই খরচ ভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় করবেন কি না, তাও পরিষ্কার করা উচিত।’
রিসিট এবং প্রমাণ সংরক্ষণের অভ্যাস
ব্যারিস্টার লিমা পরামর্শ দেন, ‘ভাড়াটিয়া যেন নিয়মিত বাসাভাড়ার রিসিট গ্রহণ করেন এবং বাড়িওয়ালাও যেন রিসিট প্রদান করেন—এমন অভ্যাস গড়ে তুললে ভবিষ্যতে আইনি প্রমাণপত্রের অভাব পড়বে না।’
তিনি মনে করেন, নগরজীবনে বাড়িভাড়া নিয়ে প্রায়ই দেখা দেওয়া এই সংঘাতের একমাত্র সমাধান হতে পারে আইনসম্মত চুক্তি, সচেতনতা এবং রেকর্ড সংরক্ষণের সংস্কৃতি। এতে ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালার মধ্যকার আস্থার সম্পর্ক যেমন গড়ে উঠবে, তেমনি অনাকাঙ্ক্ষিত দ্বন্দ্বও এড়ানো সম্ভব হবে।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=8rFJjM-1pO4
রাকিব