
ছবি: সংগৃহীত।
বর্তমানে বিচার প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈরী সাক্ষীর ভূমিকা। বিশেষ করে যৌতুক, মারামারি বা পারিবারিক সহিংসতার মতো মামলাগুলোতে এমন অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়—ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষী হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা হলেও, তারা আদালতে গিয়ে বাদীর বিপক্ষে সাক্ষ্য দিচ্ছেন।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা হয়, অনেক সময় তারা নিজেরা সেই বিষয়ে কিছুই জানেন না কিংবা ভয়, শত্রুতা অথবা আর্থিক লোভে প্রভাবিত হয়ে বাদীপক্ষের বিপক্ষে কথা বলেন। এই ধরনের সাক্ষীকে বলা হয় বৈরী সাক্ষী বা hostile witness।
আইনজীবীরা বলেন, যদি কোনো সাক্ষী আদালতে এসে বাদীপক্ষের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন, তবে তাৎক্ষণিকভাবে বাদীপক্ষের আইনজীবী আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সাক্ষীকে বৈরী সাক্ষী হিসেবে ঘোষণা করার আবেদন করতে পারেন। আদালত যদি সেটি গ্রহণ করেন, তাহলে সেই সাক্ষীর সাক্ষ্য গুরুত্বহীন বা বাতিল বিবেচিত হয়। এ অবস্থায় বাদীপক্ষ চাইলে নতুন সাক্ষী উপস্থাপনের অনুমতি চাইতে পারেন।
আইনজীবীরা আরও জানান, অনেক সময় দেখা যায়, যাদের আই উইটনেস বা প্রত্যক্ষদর্শী মনে করে সাক্ষী করা হয়, তারা পরে আদালতে এসে বলেন, তারা কিছুই দেখেননি এবং জোর করে তাদের সাক্ষী করা হয়েছে। এর ফলে মামলার অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে।
এই সমস্যা এড়াতে আইনজীবীরা পরামর্শ দেন, কাউকে সাক্ষী করার আগে অবশ্যই তার সম্মতি নেওয়া উচিত। কারো সম্মতি ছাড়া তাকে সাক্ষী হিসেবে আদালতে তোলা হলে, সেই সাক্ষী বৈরী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। পক্ষান্তরে, সম্মতি নিয়ে সাক্ষী দিলে, তিনি সাধারণত সত্য ঘটনা তুলে ধরেন এবং বিপরীতে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাক্ষী নির্বাচন ও প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সচেতনতা এবং আন্তরিকতা বাড়ালে মামলার বিচারে সঠিক রায় পাওয়া সহজতর হবে এবং বিচার প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা আরও বৃদ্ধি পাবে।
মিরাজ খান