
ছবি: প্রতীকী
বর্তমানে অনেকেই ব্যবসা কিংবা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন। কিন্তু সময়মতো সেই ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে কী ধরনের আইনি ঝুঁকির মুখে পড়তে হয়, সে বিষয়ে সম্প্রতি এক ভিডিও আলোচনায় বিস্তারিত তুলে ধরেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তাসমিয়া আঞ্জুম।
তিনি বলেন, ব্যাংক সাধারণত দুই ধরনের ঋণ দেয়—জামানতযুক্ত এবং জামানতবিহীন। প্রথমটির ক্ষেত্রে জমি, ফ্ল্যাট, স্বর্ণ বা সঞ্চয়পত্র বন্ধক রাখা হয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সাধারণত গ্যারান্টার দিতে হয়, যিনি মূল ঋণগ্রহীতার দায় বহন করতে বাধ্য থাকেন।
চেক মামলাই প্রথম ধাক্কা
ঋণ খেলাপের পর ব্যাংক যেসব আইনি ব্যবস্থা নেয় তার প্রথম ধাপে থাকে জামানতের বিপরীতে নেওয়া ব্ল্যাংক চেকের ভিত্তিতে চেক ডিজঅনার মামলা। এটি একটি ফৌজদারি মামলা, যার ফলে দোষী সাব্যস্ত হলে জরিমানাসহ কারাদণ্ডও হতে পারে। ব্যারিস্টার তাসমিয়া জানান, একাধিক চেক থাকলে একাধিক মামলাও করা হয়, যা ঋণগ্রহীতাকে আরও জটিল পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে।
তবে তিনি জানান, এসব চেক মামলায় আইনি ত্রুটি থাকলে উচ্চ আদালতে সেগুলো বাতিলের আবেদন করা যায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৬১ ধারায়। রায় হলে আপিলে গিয়ে জামিন পাওয়ার পথও খোলা থাকে।
অর্থঋণ আদালতের রুটিন পদক্ষেপ
চেক মামলার পাশাপাশি ব্যাংক অর্থঋণ আদালতে মামলা করে টাকা আদায়ে। এর আগে তারা সাধারণত দুই দফা আইনি নোটিশ ও নিলামের বিজ্ঞপ্তি দেয়। এরপরও ঋণ আদায় না হলে আদালতে মামলা দায়ের হয়।
ব্যারিস্টার তাসমিয়া জানান, এই মামলায় শুধু ঋণগ্রহীতা নয়, বন্ধকদাতা ও গ্যারান্টার—সবার নামই বিবাদী হিসেবে দেওয়া যায়। আদালতের রায়ে যদি ঋণগ্রহীতার সম্পত্তি দিয়ে পাওনা পুরোপুরি আদায় সম্ভব না হয়, তাহলে গ্যারান্টার বা বন্ধকদাতার সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত হতে পারে।
রায় এলে কী করবেন?
অর্থঋণ আদালতের রায় একতরফা হলে ৩০ দিনের মধ্যে ১০% টাকা জমা দিয়ে রিভিউ চাওয়া যায়। আপিল করতে চাইলে ৫০ লাখ টাকার বেশি ডিক্রির জন্য হাইকোর্টে, আর কম টাকার ডিক্রির ক্ষেত্রে জেলা জজ আদালতে যেতে হয়। দুই ক্ষেত্রেই রায়ের অর্ধেক অর্থ আগাম জমা দিতে হয়।
সমাধানের পথ কী?
ব্যারিস্টার তাসমিয়ার পরামর্শ, সমস্যা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমঝোতা করা, ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ রিশিডিউল করা এবং প্রয়োজনে সুদ মওকুফের জন্য আবেদন করাই বুদ্ধিমানের কাজ। তিনি বলেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া যত দীর্ঘায়িত হবে, ঋণের সুদ, জরিমানা ও চার্জ ততই বাড়বে—যা এক সময় ব্যক্তিকে দেউলিয়ার পথে ঠেলে দিতে পারে।’
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=9za9frI_Pgg
রাকিব