ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২

দুধের সংকটে মিষ্টির স্বাদে ভাটা, দামও আকাশছোঁয়া!

শ্যামল সরকার, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, চাঁদপুর

প্রকাশিত: ২২:০১, ১৭ জুন ২০২৫

দুধের সংকটে মিষ্টির স্বাদে ভাটা, দামও আকাশছোঁয়া!

গরুর দুধের সংকটে চাঁদপুরে মিষ্টিজাত ও দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এতে করে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় মিষ্টির দাম বেড়েছে হু হু করে। তবে জেলার প্রাণিসম্পদ দপ্তর বলছে, দুধের সংকটের বিষয়টি পুরোপুরি সত্য নয়; ব্যবসায়ীরাই কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন।

১৭ জুন (সোমবার) দিনব্যাপী চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন দোকান, খামার ও বাজার ঘুরে এমন তথ্য উঠে এসেছে প্রতিবেদকের কাছে। তবে জেলায় কতটি মিষ্টির দোকান আছে, তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনো নেই।

চাঁদপুরের প্রাচীন মিষ্টির দোকান **'কৃষ্ট ক্যাফে'**র পরিচালক সুমন রায় জানান, দিনে তাদের দোকানে কমপক্ষে ৪ মণ গরুর দুধ লাগে। দুধ দিয়ে তৈরি হয় দই, রসমালাই, মালাইকারী, চমচমসহ নানা পণ্য। কিন্তু বর্তমানে দুধ সংকটে অনেক অর্ডার থাকলেও সরবরাহ দিতে পারছেন না তারা। ফলে কেজি প্রতি মালাইকারী ৫৫০ টাকা, চমচম ৩২০, রসগোল্লা ২৮০, রসমালাই ৪০০ এবং ঘি ১৮০০ টাকা দামে বিক্রি করছেন তারা। তার ভাষায়, "দুধের সরবরাহ স্বাভাবিক হলে দাম কিছুটা কমানো সম্ভব হবে।"

আরেক জনপ্রিয় দোকান 'ওয়ান মিনিট'-এর মালিক সম্পদ সাহা বলেন, "আমাদের দিনে ২৫ মণ গরুর দুধ লাগে। চরাঞ্চল থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে দুধ কিনি। তবে এখন মৌসুমি কারণে দুধ কমে গেছে। শহরের গরুর দুধ কিনলে খরচ বেশি পড়ে যায়। ফলে ক্ষীর ও রসমালাই উৎপাদন আপাতত বন্ধ রেখেছি। সীমিত আকারে দই ও মিষ্টি তৈরি করছি।"

প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য বলছে, চাঁদপুরে প্রায় ৩৭২৩টি দুগ্ধখামার রয়েছে। এখানে ১ লাখ ৫ হাজার গাভী গরু পালন করছেন প্রায় ৪২ হাজার খামারি। প্রতিদিন গরুর দুধের চাহিদা ২.৩ মেট্রিক টন হলেও উৎপাদন হচ্ছে ১.৮ মেট্রিক টন। অর্থাৎ ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার লিটার।

গবাদি পশু খামারি মহসীন গাজী জানান, "শহরের দোকানিরা চরাঞ্চল থেকে দুধ কেনে, কারণ সেখানে ঘাসসহ খরচ কম। আমাদের খামারে খড়, ভূষি কিনে গরু পালতে হয়, তাই দুধের দাম একটু বেশি রাখতে হয়। বর্ষাকালে চরে দুধের উৎপাদনও কিছুটা কমে যায়। তবে সামনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।"

এদিকে সাধারণ ভোক্তা মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, "মিষ্টির দাম তো আকাশছোঁয়া! অথচ অনেক দোকানের মিষ্টিতে আটা-ময়দার শক্ত অংশ থাকে। গরুর দুধ না দিয়ে পাউডার দুধে মিষ্টি বানিয়ে গরুর দুধের দাম রাখা হচ্ছে। এটা প্রতারণা। এসব মনিটরিং জরুরি।"

তবে চাঁদপুরের জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জ্যোতির্ময় ভৌমিক বলেন, “একজন সুস্থ মানুষের দৈনিক দুধের চাহিদা অনুযায়ী এই জেলায় যথেষ্ট দুধ উৎপাদিত হয়। মিষ্টি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ঠিক নয়। বরং ব্যবসায়ীরা নিজেরাই মুনাফার আশায় কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন এবং দামের সিন্ডিকেট করেন।”

জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, “আমরা নিয়মিত বাজার তদারকি করি। কোনো অসঙ্গতি পেলেই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করি।”

চাঁদপুরের নামকরা মিষ্টির স্বাদে এখন ভাটা, দামেও লাগাম নেই এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তারা চাইছেন দুধ সরবরাহ ও মিষ্টির মান নিয়ে যথাযথ নজরদারি।

মিমিয়া

×