ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

কুড়িগ্রামের গ্রামবাংলার পুরাতন ঐতিহ্য ‘হ্যাঙ্গা’ জাল দিয়ে মাছ ধরার হিড়িক

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম।

প্রকাশিত: ০০:৪৩, ১৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ০০:৪৩, ১৮ জুন ২০২৫

কুড়িগ্রামের গ্রামবাংলার পুরাতন ঐতিহ্য ‘হ্যাঙ্গা’ জাল দিয়ে মাছ ধরার হিড়িক

দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় গ্রাম বাংলার পুরাতন ঐতিহ্য হ্যাঙ্গা দিয়ে মাছ ধরার হিড়িক পড়েছে। সম্প্রতি সময়ে বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলের কারণে জেলার খালবিল গুলো পানিতে ভরে যায়। এ সময় এসব খাল বিলে দেশীয় টেংনা পুটি শিং মাগুর কৈ টাকি সহ নানা জাতের মাছ পাওয়া য়ায়। জেলার বিভিনন উপজেলার মানুষ কম বেশী সবাই নতুন পানিতে মাছ ধরে। তবে সবচেয়ে বেশি মাছ ধরছে সীমান্ত ঘেষা ফুলবা উপজেলার নাওডাঙ্গা গ্রামের একটি বিলে মাছ ধরার অসাধারণ দৃশ্য চোখে পড়ার মতো।

ওই বিলে বোরো ধানের জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করার সময় স্থানীয় শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের প্রায় ১০ থেকে ২০ জন মিলে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে হ্যাঙ্গা জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন। এ অঞ্চলে মাছ ধরার এই উপকরণটি কেউ বলছেন ‘হ্যাঙ্গা জাল’ আবার কেউ বলেন ‘ঠেলা জাল’। এই ত্রিকোণা বিশিষ্ট এজাল দিয়ে মাছ ধরার চিত্র এ অঞ্চলের গ্রামবাংলার একটি প্রাচীনতম ঐতিহ্য।

কুড়িগ্রাম জেলায় রয়েছে ১৬টি নদ নদী। রয়েছে ৫২টি ছড়া ও বিল। বর্ষাকাল এলেই নদ-নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ জেলার প্রত্যেকটি গ্রামে গ্রামে এ জালের চাহিদা বেড়ে যায়। এই জাল শিশু, তরুণ থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষজন মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আনন্দ মাঠে নেমে পড়ে। চরম আনন্দে দল বেঁধে মাছ ধরে।


ধরলা ও বারোমাসিয়া (বাণিদাহ) নদী পাড়ের মানুষ, পাঁচগাছি বিল,দাসের হাট বিল ভাঙ্গামোর বিল,সরলাবিল, আর নদ-নদী তীর্বতী এলাকায় হ্যাঙ্গা জাল দিয়ে মাছ শিকার করে সৌখিন এই মাছ স্বীকারীরা। অনেকে এই মাছ স্বীকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে । ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা এলাকার কনক চন্দ্র রায় বলেন, ‘হ্যাঙ্গা জাল তিন ধরনের হয়ে থাকে। ছোট, মাঝারি ও বড়। ছোট হ্যাঙ্গা দিয়ে শিশুরা এমনকি গ্রামের নারীরাও মাছ শিকার করতে পারে । মাঝারি হ্যাঙ্গা দিয়ে তরুণরা মাছ ধরে আর বড় হ্যাঙ্গা দিয়ে স্বাভাবিক বয়সের মানুষ এবং পেশাজীবিরা মাছ ধরে থাকে। একটি হ্যাঙ্গা জাল তৈরি করতে সর্বনিম্ন তিনশ থেকে দেড় হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে বলে জানান তিনি। 

তিনি আরও জানান আমাদের বাড়ির আশেপাশে কোন নদী নেই। আমরা বর্ষা মৌসুমে বাড়ির সামনে বিলে হ্যাঙ্গা ও চটকা জাল দিয়ে মাছ ধরে থাকি। চলতি সপ্তাহে প্রতিদিন শেষ বিকালে ধানের জমি ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করা শুরু করলে মুহূর্তের মধ্যে শিশু-কিশোরসহ কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ জন মানুষ এক সঙ্গে আনন্দের সাথে মাছ ধরেছি। এখন আর আগের মতো দেশি মাছ নেই। তারপরও বেশ কিছু মাছ পেয়েছি।


একই এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘হ্যাঙ্গা জাল দিয়ে মাছ ধরা গ্রাম বাংলা পুরাতন একটি ঐতিহ্য। সাধারণত দেশি জাতের মাছ ধরা হয়ে এ জাল দিয়ে। বৃষ্টির পানিতে যখন গ্রামের খালে বিল ও ডোবা নালা ভরে যায়, তখন আমরা হ্যাঙ্গা দিয়ে মাছ ধরি । তবে এখন আর আগের মতো দেশি মাছ নেই। অনেক দেশি মাছ এখন বিলে পাওয়া যায় না। দেড় ঘন্টা মাছ ধরে ৫শ গ্রাম পুটি, চ্যাংটি ও গদা মাছ পেয়েছি।

চতুর্থ শ্রেনির শিক্ষার্থী নিলয় চন্দ্র রায় বলে, ‘হ্যাঙ্গা জাল দিয়ে মাছ ধরার মজাই আলাদা। খুব ভালো লাগে, আনন্দ লাগছে। আজ এখানে প্রায় আধা কেজি মাছ পেয়েছি।

নাওডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হানিফ সরকার জানান, এখন দেশি প্রজাতির মাছের সংখ্যা কমেছে। একটা সময় আমি নিজেও বাড়ির পাশের বিলে ও ডোবায় গ্রাম বাংলার পুরাতন ঐতিহ্য হ্যাঙ্গা দিয়ে মাছ ধরেছি। বর্ষাকালে বাড়ির আশেপাশে চারদিকে পানি উঠায় মাছের বিচরণ বেড়ে যায়। তখন গ্রামবাসী তরুন যুবক সবাইমিলে মাছ ধরতে নেমে যায়। তার মতে অতিরিক্ত জমিতে কীটনাশক প্রয়োগের ফলে দিনে দিনে ছড়া বিলে ডোবায় দেশি মাছ কমে গেছে। এ দিকে সরকারের নজর দেয়া দরকার।

রিফাত

×