
ছবি: সংগৃহীত
আজকের সকালটি ঢাকাবাসীর জন্য শুরু হয়েছে এক অন্যরকম আবহে। ভোর থেকেই আকাশ মেঘলা, তার সাথে থেমে থেমে রিমঝিম বৃষ্টি। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে যেমন শহরের পরিবেশে আসে এক স্বস্তির ছোঁয়া, তেমনি সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে দেখা দেয় নানা জটিলতা।
বৃষ্টিতে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় রাস্তায় পানি জমে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে গণপরিবহন সংকট, অতিরিক্ত ভাড়া ও দীর্ঘ যানজটে নাকাল হতে হয় কর্মজীবী মানুষকে। অনেকেই কাকভেজা অবস্থায় অফিসে পৌঁছান, কেউ আবার বাধ্য হয়ে ফিরে যান বাসায়। যাদের বাসা থেকে কাজ করার সুযোগ রয়েছে, তারা কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও অনেকেই এখনও এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
শুধু অফিসপাড়া নয়, বৃষ্টির প্রভাব পড়ে গৃহস্থালির কাজেও। দিনের শুরুতে বাজারে যাওয়া, বাচ্চাদের স্কুলে পৌঁছে দেওয়া কিংবা ঘরের দরকারি কাজগুলোর অনেকটাই ব্যাহত হয়। কাপড় শুকানো, রান্নার উপকরণ কেনা বা গ্যাস-বিদ্যুৎ সমস্যা বর্ষার দিনে আরও জটিল আকার ধারণ করে।
তবে আবহাওয়ার এই বৈরিতার মধ্যেও কাজ চালিয়ে যেতে চাইলে চাই কিছু বাড়তি প্রস্তুতি ও মানসিক প্রস্তুতিও। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী যেহেতু বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন চলতে পারে, তাই আগেভাগে দিনটির পরিকল্পনা করে নেওয়া বিশেষ উপকারী। অফিসগামীদের জন্য জলরোধী ব্যাগ, ছাতা বা রেইনকোট অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। যাদের বাইকে চলাফেরা করতে হয়, তাদের জন্য জলরোধী জ্যাকেট ও বুট ব্যবহার করা ছাড়া উপায় নেই।
গৃহস্থালি কাজেও সামঞ্জস্য আনতে হবে। শুকনো খাবার মজুত রাখা, প্রয়োজনীয় বাজার আগেই করে ফেলা বা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য বিকল্প আলোর ব্যবস্থা করে রাখলে হঠাৎ সমস্যায় পড়তে হয় না। যারা প্রযুক্তিনির্ভর কাজের সঙ্গে যুক্ত, তারা বাসা থেকেই ইন্টারনেট ও অনলাইন অ্যাপ ব্যবহার করে দিনের কাজ এগিয়ে নিতে পারেন। এতে সময়ও বাঁচে, ট্রাফিক বা ভেজা অবস্থায় অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বর্ষার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। বৃষ্টিতে ভিজে ঠান্ডা-জ্বর, অ্যালার্জি বা ফাঙ্গাল সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই কাপড় ভিজলে দ্রুত পরিবর্তন করে নেওয়া, গরম কিছু খাওয়া এবং প্রয়োজন হলে গরম পানিতে গোসল করা উচিত। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের এই সময়ে সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরি।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি নিম্নচাপের প্রভাবে আগামী কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে আগামী দিনগুলোতেও একই রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতে পারে নাগরিকরা।
বৃষ্টিভেজা দিন মানেই কেবল বিড়ম্বনা নয়। যদি সচেতনভাবে দিনটি পরিচালনা করা যায়, তবে প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্য উপভোগ করেও জীবনের গতি রক্ষা করা সম্ভব। বর্ষার রোমান্টিক আমেজ আর দায়িত্বের ভার একসাথে মেলাতে হলে চাই বাস্তবসম্মত প্রস্তুতি, ধৈর্য এবং সামান্য সৃজনশীলতা।
এম.কে.