
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে এক গৃহবধূ নিজ শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত শনিবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার বিষয়টি জানাজানি হয়।
গৃহবধূ ফাতেমা আক্তার (২৬) সীতাকুণ্ড উপজেলার ১ নম্বর সৈয়দপুর ইউনিয়নের উত্তর বগাচতর গ্রামের মো. মুসলিমের স্ত্রী। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে ফাতেমাকে তার স্বামী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। সম্প্রতি পারিবারিক কলহের একপর্যায়ে স্বামী আবারও মারধর করলে তিনি ঘরের ভেতর কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। বতর্মানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছেন। তার শরীরের প্রায় ৫৫ শতাংশ অংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আমিন জানান, ওদের ঘরে ঝগড়া লেগেই থাকত। প্রায় সময়ে মেয়েটিকে তার স্বামী মুসলিম মরধর করত। ঘটনার দিন সকালে মেয়েটির সঙ্গে শাশুড়ি ও স্বামীর ঝগড়া হয়েছে। এক পর্যায়ে স্বামী মুসিলম মেয়েটিকে মারধর করেছে। পরে শুনি মেয়েটি আগুনে দগ্ধ হয়েছে।
এলাকার বাসিন্দা ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা মুসলিমের বাড়িতে যায়। সেখানে গিয়ে মেয়েদের কিছু চুল ও আগুনে পোড়া- ছেঁড়া কাপড় দেখতে পাই। মুসলিমের ছেলের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, ঘটনার দিন মুসলিম তার স্ত্রীকে মারধর করেছে। তবে আগুনের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারিনি। অনেকে বলছে, মুসলিম তার স্ত্রীকে হত্যা করতে পরিকল্পিতভাবে আগুন দিয়েছে। অনেকে বলছে, ওই মেয়েটি নিজের শরীরে নিজেই আগুন দিয়েছেন।’
চমেক হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আইসিইউতে ভর্তি ফাতেমা। আগুনের বিষয়ে কথা বললে ফাতেমা জানান, তিনি নিজেই নিজের শরীরে আগুন দিয়েছেন। ঠিক কি কারণে আগুন দিয়েছেন তা জানাননি।
স্বামী মো. মুসলিম জানান, ‘স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়াবিবাদ হয়। আমার সঙ্গেও প্রায় সময়ে ঝগড়া হতো। ঘটনার দিন আমি সকাল ৫টার দিকে যাত্রীসহকারে অটো নিয়ে বের হয়ে যাই। ৭টার দিকে বাসায় আসি। এসে শুনি আমার মায়ের সঙ্গে ফাতেমার ঝগড়া হয়েছে। পরে আমি রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ পর দেখি পাশের রুম থেকে ফাতেমা চিৎকার করছে। ঘুম থেকে উঠে দেখি তার শরীরে আগুন। আমি দরজার ছিটকিনি খুলে আগুন নিভানোর চেষ্টা করি। ততক্ষণে ফাতেমার শরীরের অনেকাংশ পুড়ে যায়। এরপর অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে হাসপাতাল নিয়ে আসি।’
মুসলিম বলেন, ‘অনেকে বলেছে আমি স্ত্রীকে হত্যা করতে তার গাঁয়ে আগুন দিয়েছি। এটা মিথ্যা অপবাদ। এমন কাজ করলে আমি পালিয়ে যেতাম। এভাবে হাসপাতালে পড়ে থাকতাম না।’
ভুক্তভোগীর মেজ ভাই নুর নবী বলেন, ‘আমার বোনকে প্রায় সময় মুসলিম নির্যাতন করতেন। আমরা বলতাম, তুই আর সংসার করিস না। তখন বোন বলতো, তিনটি ছোট ছোট সন্তান; তাদের রেখে কিভাবে আসবে। ছেলেদের মুখের দিকে তাকিয়ে নির্যাতনের পরও মুসলিমের সংসার করেছে। তার প্রতিদানে আমার বোন আজ আইসিইউতে।’
সীতাকুণ্ড থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে আমরা গিয়েছিলাম। পারিবারিক কলহকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুমু