
ছবি: জনকণ্ঠ
দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত পর্যটন। পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত সিলেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ সড়ক সালুটিকর-গোয়াইনঘাট রোড যেনো দুর্ভোগের প্রতীক। জনপ্রিয় পর্যটন স্পট বিছানাকান্দি, পান্থুমাইসহ গোয়াইনঘাট এলাকার লক্ষাধিক মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটির বেহাল এখন সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বিছানাকান্দি ও পান্থুমাইয়ের মতো পর্যটন এলাকাগুলোতে ঈদের ছুটিতেও পর্যটকদের দেখা মেলেনি। কারণ, রাস্তার দুরবস্থার কারণে সেখানে পৌঁছানোই দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে। পিচ উঠে যাওয়া, গভীর গর্ত, ভাঙা কালভার্ট ও পানিতে ডুবে থাকা রাস্তার এমন করুণ চিত্র যেন প্রতিদিনের বাস্তবতা।
এদিকে সম্প্রতি সিলেটে এসে দুইজন উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, পাথর কোয়ারি খোলা হবে না, বরং পর্যটনকেই দেওয়া হবে সর্বোচ্চ প্রাধান্য। এই ঘোষণায় স্থানীয় পর্যটনখাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আশার আলো দেখা দিলেও, বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। পর্যটনের বিকাশের জন্য যেখানে অবকাঠামো উন্নয়ন ও যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি, সেখানে সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়কের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট বছরের পর বছর ধরে বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকায় পর্যটন কার্যত থমকে গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গোয়াইনঘাট-সালুটিকর সড়কের বেশিরভাগ অংশ ভাঙাচোরা ও অসংখ্য খানাখন্দে পরিপূর্ণ। কোনো কোনো জায়গায় হাঁটুসমান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রাস্তা নাকি জলাশয়-তা আলাদা করা মুশকিল। শিক্ষার্থী, রোগী, পর্যটকসহ সকল শ্রেণির মানুষ এই সড়কে প্রতিদিন চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। দেখা গেছে, অল্প বৃষ্টিতেই যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, সময় লাগে কয়েক গুণ বেশি।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি শুরু হয় সালুটিকর-তোয়াকুল-বঙ্গবীর-গোয়াইনঘাট সড়কের আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ। দুই ভাগে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই কাজের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় প্রায় ২৯ কোটি টাকা। চুক্তিমূল্যে কাজটি পায় ডিসিএল অ্যান্ড এমডিএইচ (জেবি) নামে একটি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। মূল ঠিকাদার বরিশালের দেলোয়ার হোসেন, তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন সুনামগঞ্জের ফয়সল নামের এক ঠিকাদার।
কাজের নির্ধারিত সময় ছিল ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত, যা পরে আরও ৫ মাস বাড়িয়ে ২০২৫ সালের মে পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এতদিনেও মাত্র ৫০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে উপজেলা প্রকৌশলীর বক্তব্য। যদিও স্থানীয়রা বলছেন, ৩০ শতাংশও হয়নি। অনেক স্থানে ঢালাইকৃত অংশ ভেঙে গেছে, ফাটল ধরেছে।
এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে শনিবার সালুটিকর বাজারে এক বিশাল মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এতে এলাকাবাসী দাবি করেন, ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সালুটিকর-তোয়াকুল-বঙ্গবীর-গোয়াইনঘাট সড়ক উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হয় প্রায় কয়েক বছর আগে। কাগজে-কলমে কাজ শুরু হলেও বাস্তবে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। রাস্তার কিছু কাজ দৃশ্যমান হলেও ঢালাই দেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই তা উঠে যাচ্ছে। কাজে টেকসই কোনো পরিকল্পনা নেই। একবারও প্রকল্প পরিচালক কাজ পরিদর্শনে আসেননি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতি রয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আগামী ২৪ দিনের মধ্যে কাজ পুরোদমে শুরু করে শেষ না করলে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো।
প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ১৯৯৪ সালে এই রাস্তার কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তবে দীর্ঘ ৩০ বছরেও এই সড়ক স্থায়ী রূপ পায়নি। বর্তমানে সড়কটি গর্ত আর খানাখন্দে পরিণত হয়ে এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা, শিক্ষা ও চিকিৎসা কার্যক্রমকে ব্যাহত করছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, পরিবহণ চালক, রেস্টুরেন্ট ও হোটেল মালিকরা বলছেন, রাস্তা ঠিক না হলে আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। পর্যটকরা এখানে আসতে ভয় পায় শুধু মাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায়।
এ প্রসঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রকৌশলী হাসিব আহমেদ দৈনিক একাত্তরের কথাকে জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। মানসম্পন্ন কাজ করতে গিয়ে গতি কিছুটা কম হলেও দ্রুতই কাজ শেষ হবে। কিছু স্থানে কাজের মান খারাপ হওয়ায় সেগুলো আবার মেরামত করা হবে।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ দৈনিক একাত্তরের কথাকে বলেন, সড়কটি এলজিইডির অধীনে। বিষয়টি দৃষ্টিগোচরে আসার পর এলজিইডির সঙ্গে আমি কথা বলেছি। দ্রুত কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।
সাব্বির