ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

আলফাডাঙ্গায় চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবদল নেতা  আটক

আরিফুজ্জামান চাকলাদার, আলফাডাঙ্গা, ফরিদপুর

প্রকাশিত: ১০:২৭, ১৮ জুন ২০২৫

আলফাডাঙ্গায় চাঁদাবাজির অভিযোগে যুবদল নেতা  আটক

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর বাজারে পোল্ট্রি ব্যবসায়ী দোকান থেকে যুবদল নেতা পরিচয়ে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে দোকান মালিক ও  জনতার হাতে আটক হয়েছে। গত সোমবার (১৬ জুন) রাতে গোপালপুর বাজারে মুরগি ব্যবসায়ী মুল্লুক চান ওরফে মুন্নু'র ছেলে ফয়সালের নিজ প্রতিষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটেছে।   

এ চাঁদাবাজিতে আবারও  আলোচনায় কামারগ্রাম জুয়েল মোল্লার ছেলে  ৪নং ওয়ার্ডে কথিত যুবদল নেতা শাহেদ। পারিবারিক বিরোধের মীমাংসার নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর পরিবারের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বাজারজুড়ে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছেন। যিনি নিজেকে গোপালপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি পরিচয় দিয়ে থাকেন—যদিও  এর আগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে  উপজেলা যুবদলের আহবায়ক  শাহিন মোল্লা   জানিয়েছেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে কোনো কমিটিই নেই।

ঘটনার সূত্রপাত ১৫ জুন রাত ১০টার দিকে। ফয়সাল নামের মুরগি ব্যবসায়ী তার পারিবারিক বিরোধের জেরে শাহেদ ও তার প্রায় ১০ জন সহযোগী  দোকানে এসে তাকে বাইরে যেতে বলেন। ফয়সাল দোকানের বাহিরে পাশের 'স' মিলে অবস্থান করলে বিভিন্ন আলোচনার পরে তাকে(ফয়সাল) হুমকি দিয়ে বলেন, মীমাংসা না করলে “খবর আছে”।

পরদিন ১৬ জুন সকাল ১০টার দিকে আবারও দোকানে গিয়ে ফয়সালকে না পেয়ে তার বাবা মুল্লুক চান ওরফে মুন্নুর কাছে শাহেদ বলেন, “চাচা, কিছু টাকা দেন, সব ঠিক হয়ে যাবে, না হলে ঝামেলা হবে।” বিকেলে আবার আসে  দোকানে  পর টাকা না পেয়ে মুল্লুক চানকে ধাক্কা মেরে ক্যাশ বাক্স থেকে টাকা নিয়ে নেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবার।মারামারির চিৎকার শুনে বাজারের লোকজন ছুটে এসে শাহেদকে আটক করে, তবে তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।

পরিস্থিতি থমকে যায়নি এখানেই। ফয়সাল ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সহায়তা চাইলে, পুলিশের আগেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান আলফাডাঙ্গা পৌর যুবদলের সভাপতি মিজান ও তার লোকজন। পরে পুলিশ এলে মিজান ও বাজার কমিটির সভাপতি আমিরুল মিমাংসা নামে দায়িত্ব নিয়ে শাহেদকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

এ ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে চাইলে ফয়সাল বলেন, “আমার পারিবারিক সমস্যাকে ঘিরে জোর করে টাকা দাবি করেছে। দোকানে না থাকায় বাবাকে হুমকি দিয়ে দোকানে এসে আমার বাবাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ক্যাশবাক্স থেকে টাকা নিয়েছে। আমরা থানায় জানিয়েছি পুলিশ এসে চলে গেছে।”

শুধু এই ঘটনাই নয়, এর আগে ৯ জুন কামারগ্রামের মুদি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামের দোকানে গিয়ে সিগারেট না থাকায় পিস্তল ঠেকিয়ে ২০ হাজার টাকা দাবি করে শাহেদ। ড্রয়ার ভেঙে টাকা নিয়ে চলে যায়। ফয়সালের মতো রফিকুলও থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ঐ ঘটনাকে কেন্দ্র জেরে ঈদের সময় বাড়ি বেড়াতে আসা এক গার্মেন্টস কর্মী কাওসার খানকেও রাস্তা আটকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে শাহেদের বিরুদ্ধে।
বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, কাপড় ব্যবসায়ী জয়, কাঁচামালের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর খান এবং টিটিসি মোড়ের কাবুলের দোকানেও একই ধরণের হুমকি-ধামকি চালিয়েছে শাহেদ। তারা বলেন,অন্য ব্যবসায়ীরা থানায় অভিযোগ করেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ আমারা আর কি করবো। 

এদিকে শাহেদ জনকণ্ঠকে বলেন,আমির ভাইয়ের আত্মীয় "র পারিবারিক বিরোধে মিমাংসা প্রস্তাবে দোকানে গিয়ে দাঁড়ালে তারা ( ফয়সাল) উত্তেজিত হয়ে আমাকে মারধর করে দোকানের ভিতর নিয়ে চাঁদাবাজির মিথ্যা  অভিযোগ দেয়।

পৌর যুবদলের সভাপতি মিজান জনকন্ঠকে  বলেন,কৃষকদল নেতা আমিরের চাচাতো ভাইয়ের  পারিবারিক বিরোধে   শাহেদকে ফোন দিলে সাহেদ দোকানে যায়।তারা উত্তেজিত হয়ে সাহেদের উপর আক্রমণ করে দোকানের ভিতর নিয়ে চাঁদাবাজির মিথ্যা অপবাদ দেয়।  প্রশ্নের জবাবে বলেন আমাকে  নিয়ে একটি রাজনৈতিক মহল গেম চালাচ্ছে। 

আলফাডাঙ্গা থানার ওসি শাহজালাল আলম জনকণ্ঠকে বলেন“আমি ৯৯৯থেকে ফোন পেয়ে ফোর্স পাঠাই,তারা গেলে স্থানীয়রা মিমাংসা করে দিবে বিধায় থানা পুলিশ চলে আসে। তবে আমি জানতামনা যে এই সেই  শাহেদ,আমার অফিসার এসে ও বলে নাই ঐ সেই সাহেদ। এখন জানলাম খোজ খবর নিয়ে দেখছি।”

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে এমন হুমকি-চাঁদাবাজির ঘটনায় আতঙ্কে আগে ভাগেই দোকান বন্ধ করতে হয়। অভিযোগ করার পরেও পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় শাহেদ দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

আঁখি

×