ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ‘কনিকা সুন্দরী’ গরমকালেও, ফিরেছে ৯০ দশকের সেই জারি গান

বাঁধন মোল্লা, কনট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বকশীগঞ্জ, জামালপুর

প্রকাশিত: ১০:১৬, ১৮ জুন ২০২৫

দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ‘কনিকা সুন্দরী’ গরমকালেও, ফিরেছে ৯০ দশকের সেই জারি গান

শীতের সীমানা পেরিয়ে গান এখন সারা বছরের আবেগ। এক সময় শীতকাল মানেই গ্রামবাংলার উৎসবের আমেজ ভোরের কুয়াশা কাটতে না কাটতেই মাঠে শুরু হতো পালা গান, ঢুলিতে ভেসে উঠত যাত্রাপালার সুর, আর সন্ধ্যার পর পর গ্রাম কাঁপিয়ে উঠত জারি-ভাটিয়ালি। সেই সোনালি দিনের অনেক কিছুই আজ স্মৃতি মাত্র, তবে সেই স্মৃতিকে প্রাণ দিচ্ছে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সারমারা এলাকার একদল গানপাগল মানুষ।

তাদের গানের দলের নাম ‘কনিকা সুন্দরী’। নামেই যেমন চমক, গানেও তেমনি সুর আর আবেগের বিস্ফোরণ। এ যেনো জারি নয়, যেন চলমান জীবনের গল্প। ‘কনিকা সুন্দরী’র গান শুধু গান নয়, যেন চলমান আবেগের এক মিছিল। আগে জারি গান ছিল মূলত শীতকালীন বিনোদন, এখন তা সারা বছরের। গরম হোক, বৃষ্টি হোক বা দুর্যোগ ‘কনিকা সুন্দরী’ দল থেমে থাকে না। তাদের সুরে উঠে আসে মাটি, মানুষ আর ইতিহাসের টান। স্থানীয় আঞ্চলিক ভাষায় গাওয়া এই জারি গানগুলো মুখে মুখে ফিরছে তরুণদের মুখে, প্রবীণদের স্মৃতিতে।

পরিবারই তাদের আসল দল, প্রায় ৩০ সদস্যের এই দলে আছেন বাবা-ছেলে, ভাই-ভাই, এমনকি একই পরিবারের একাধিক সদস্য। গান এখন শুধু শখ নয়, হয়ে উঠেছে এক জীবন্ত সংস্কৃতি। সারমারা বাজারের তরুণদের উদ্যোগে গড়ে ওঠা এই দল এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, সনন্দবাড়ী, রাজীবপুর, রৌমারীসহ আশপাশের গ্রামগঞ্জেও।

শেরপুরের এক বাস্তব ঘটনা থেকেই সুর ও অনুপ্রেরণা
‘কনিকা সুন্দরী’র বেশ কিছু গানের ভিত্তি সত্য ঘটনা। শেরপুর জেলার এক করুণ কাহিনিকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে তাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় জারি গান। সেখানে আছে হারিয়ে যাওয়া, প্রতিবাদ, প্রেম, আত্মত্যাগ যা জীবনের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠে আসে সুরে, কথায়। অনেকেই বলেন এই গান যেন শুধু গান না, জীবনেরই কথা!

ভালোবাসায় বাঁধা, সম্মানই পারিশ্রমিক ‘কনিকা সুন্দরী’ কোনো আর্থিক লাভের জন্য গান গায় না। যারা ডাকেন, তারা যতটুকু পারেন দেন। কিন্তু গান শেষে তারা যে ভালোবাসা পান, সেটাই তাদের বড় প্রাপ্তি। দলটির লক্ষ্য গ্রামবাংলার হারিয়ে যেতে বসা জারি গানকে জীবিত রাখা। গানই বাঁচিয়ে রাখে মাটির টান, মঞ্চ নেই, মাইক নেই কিন্তু আবেগ আছে। এই আবেগই ‘কনিকা সুন্দরী’কে এগিয়ে নিচ্ছে। প্রজন্ম বদলালেও তারা দেখিয়ে দিচ্ছে সংস্কৃতি কখনো মরে না, যদি কেউ প্রাণ দিয়ে ধরে রাখে।

যেখানে মানুষ গান ভুলতে বসেছে, সেখানে কিছু মানুষ এখনও সেই গানকে বাঁচিয়ে রেখেছে। ‘কনিকা সুন্দরী’ সেই প্রাণশক্তির নাম, যাদের গান শুনলে যে কেউ হারিয়ে যাবে ৯০ দশকের গ্রামীণ বাংলায়। এই গল্প শুধু একটি গানের নয়, এটি মাটি ও মানুষের, অতীত ও বর্তমানের এক গাঁথা।

আঁখি

×