ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

এখনও মানুষের মনে ধানমন্ডির সেই জাহাজ বাড়ি

মোহাম্মদ সজীব, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ১০:২২, ১৮ জুন ২০২৫

এখনও মানুষের মনে ধানমন্ডির সেই জাহাজ বাড়ি

ছবি: জনকণ্ঠ

রাজধানীর ধানমন্ডির ৫/এ সড়কের সেই জাহাজ বাড়ির গল্প যেন মানুষের হৃদয়ের এক হারিয়ে যাওয়ার বেদনার গল্প, দৃষ্টিনন্দন এই বাড়িটি যেন কেড়ে নিয়েছে ধানমন্ডির এক সৌন্দর্যের প্রতীক। আজ থেকে বছর দশেক আগেও ধানমন্ডি লেকের পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় মানুষের চোখে পড়তো জাহাজ আকৃতির একটি চমৎকার বাড়ি। খয়েরি রঙের সেই বাড়িটি পরিচিত ছিল জাহাজবাড়ি নামে। তবে বাড়িটির মূল নাম ছিল ‘চিশতিয়া প্যালেস’।

মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রাস্তা ধরে কিছু দূর সামনে এগোলেই চোখে পড়তো দৃশ্যমান এই বাড়িটি। বর্তমানে লেকের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার পথে একনজর তাকাতেই মানুষের মুখে শোনা যায়, “ইস! কত সুন্দর এখানে একটা জাহাজ বাড়ি ছিল, এখন আর নেই।” ধানমন্ডি লেকের হৃদয়ের স্পন্দন ছিল এই বাড়িটি। এটি ভেঙে ফেলায় অনেকটাই হারিয়ে গেছে লেকের সৌন্দর্য। ব্যবসায়ী এ কে এম আনোয়ারুল হক চৌধুরী বাড়িটির নির্মাণের কাজ শুরু করেন ১৯৯৩ সালে। এক বছর পর ১৯৯৪ সালে কাজ সম্পন্ন হয়। প্রায় ষোল কাঠা জমির ওপর এই বাড়িটি বানিয়েছিলেন তিনি। (খাজা মইনুদ্দিন চিশতি (রহ.) এর অনুসারী ছিলেন তিনি।)

আনোয়ারুল হক চৌধুরী জাহাজবাড়ি তথা চিশতিয়া প্যালেসে এনজিওর কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। ১৯৮১ সালে ‘শের-এ-খাজা ওয়ার্ল্ড পিস অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ নামে একটি উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন তিনি। সেটির কার্যক্রম চিশতিয়া প্যালেস থেকেই পরিচালনা করা হতো।

এছাড়া ‘চিশতিয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ’ নামে তার প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। তিনি একসময় ছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী।

বাড়িটির আকৃতির সাথে গির্জার মিল থাকায় স্থানীয় অনেকেই এটিকে গির্জা মনে করতেন। কেউ কেউ আবার মনে করতেন, এটি রহস্যময় বাড়ি। বাড়িটিতে জ্বিন-ভূত আছে বলেও জোর গুঞ্জন ছিল।

চিশতিয়া প্যালেস সত্যিকার অর্থেই ছিল প্রাসাদতুল্য একটি বাড়ি। বাড়িটি বিস্তৃত ছিল ১৫.৮১ কাঠা জায়গা জুড়ে। প্যালেসে প্রবেশের জন্য ছিল দুটি ফটক। প্রথম ফটক দিয়ে প্রবেশের পর দেখা যেত এক সুইমিং পুল। সেখান থেকে আরেকটু সামনে এগোলেই দেখা যেত দ্বিতীয় ফটকটি। দ্বিতীয় ফটকটি দিয়ে প্রবেশ করলে দেখা মিলতো একটি বারান্দার, যার পাশ দিয়ে ছিল প্যালেসে উঠে আসার সিঁড়ি। মোট ৩৭টি গম্বুজ ও মিনার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বাড়িটির প্রধান গম্বুজটি ছিল লম্বায় মূল ভবনের প্রায় পাঁচগুণ।

বাড়িটি শুরুতে জাহাজ আকৃতির ছিল না। ১৯৯৬ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন মানুষের হাঁটা ও চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরি করায় বাড়িটির লেকসংলগ্ন প্রাচীরটি ভেঙে ফেলতে হয়। এরপর আনোয়ারুল চৌধুরী বাড়ির প্রাচীরটি জাহাজের মতো আকৃতিতে পুনঃনির্মাণ করেন। তার মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরীরা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। বর্তমানে বহুতল একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে জায়গাটিতে।

মুমু ২

×