ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

মৃতদেহের সঙ্গে পারিবারিক সেলফি! কোথায় এমন সংস্কৃতি?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:১৭, ১৮ জুন ২০২৫

মৃতদেহের সঙ্গে পারিবারিক সেলফি! কোথায় এমন সংস্কৃতি?

ছবি: সংগৃহীত

ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ সুলাওয়েসির পার্বত্য অঞ্চল টোরাজা—এখানে মৃত্যু মানে বিচ্ছেদ নয়, বরং নতুনভাবে সম্পর্কের উদযাপন। এ জাতিগোষ্ঠীর মানুষ মৃত স্বজনদের যত্ন করেন ঠিক যেমন জীবিতদের করেন। তারা বিশ্বাস করেন, ভালোবাসা কেবল জীবিতদের জন্য নয়, মৃতরাও সে ভালোবাসার প্রাপ্য।

বিশ্বের অন্য প্রান্তে যেখানে মৃত্যু মানে কান্না, শোক ও বিদায়, সেখানে টোরাজায় তা এক মহা উৎসব। উচ্চবিত্ত পরিবারের মৃতদের স্মরণে চলে জমকালো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া। প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী, মৃতদের ‘তাউ-তাউ’ নামে কাঠের মূর্তি তৈরি করে কবরের সামনে স্থাপন করা হয়। কেউ কেউ ২৩টির বেশি মহিষ বলি দিলে তাদের সম্মানে বিশেষ মনোলিথও স্থাপন করা হয়।

বার্ষিক ফসল কাটার পরে শুরু হয় ‘মানেনে’ নামক এক অদ্ভুত অথচ হৃদয়স্পর্শী উৎসব। এই সময় পরিবার ও পাড়া-প্রতিবেশীরা মিলে মৃতদেহ কবর থেকে তুলে এনে রোদে শুকায়, নতুন কাপড় পরায়, চুল আচড়ায়, গয়না পরায়—এমনকি আবার ছবি তোলে। যেন জন্মদিন বা বিয়ের অনুষ্ঠান।

উচ্চবিত্তদের অন্ত্যেষ্টিতে গরু-মহিষ বলি, ঐতিহ্যবাহী গান-বাজনা, স্থানীয় মদ খাওয়া, এমনকি ষাঁড়ের লড়াই ও মোরগের যুদ্ধ চলে। এতে সবাই অংশ নেয়। শোক নয়, বরং এটি এক আনন্দঘন সামাজিক মিলনমেলা। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরাও দাদির মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে ছবি তোলে।

মৃত আত্মীয়ের সঙ্গে ছবি তোলা টোরাজায় খুব সাধারণ ব্যাপার। কফিন খোলা হয়, মৃতের পায়ে ঘষা দেওয়া হয়, আংটি আবার তার হাতে পরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আবার কফিনে রেখে ক crypt-এ রাখা হয় পরবর্তী বছর ‘মানেনে’র জন্য।

টোরাজারা প্রাচীনকালে মৃতদের কফিন ঝুলিয়ে রাখতেন পাহাড়ি গুহার ধারে। আজও তারা প্রকৃতির মাঝে পাথরের ঢিবির ভেতর বা পাহাড়ের গায়ে কবর বানান। তাদের বিশ্বাস, মৃত্যু কোনো শেষ নয়, এটি চক্রের এক ধাপ মাত্র। 

বিশ্বজুড়ে যেখানেই মৃত্যু মানে ভয়, টোরাজায় তা ভালোবাসার গভীর বহিঃপ্রকাশ। তাদের মতে, “আমরা যাদের ভালোবাসি, তারা মৃত্যুর পরও আমাদের সঙ্গে আছেন—আমরা শুধু আলাদা ঘরে থাকি।”

মুমু ২

×