
ছবি:সংগৃহীত
বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় অবসরকালীন সময়ের জন্য সঞ্চয় গড়া হয়ে উঠছে দিন দিন কঠিন। তবে প্রযুক্তি এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের অগ্রগতির ফলে ‘প্যাসিভ ইনকাম’ বা অলস আয় এখন অনেকের জন্য একটি বাস্তব সম্ভাবনা হয়ে উঠেছে। ঘরে বসে কিংবা একবার শ্রম দিয়ে নিয়মিত আয় করার এই ধারণাটি বিশেষজ্ঞদের মতে ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের আর্থিক পরামর্শক ও উদ্যোক্তাদের মতে, অবসর জীবনে আয় অব্যাহত রাখতে অন্তত ২৪টি কার্যকরী পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। নিচে এসব উপায়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:
১. রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ
বাসা-বাড়ি কিনে তা ভাড়া দেওয়া দীর্ঘমেয়াদি প্যাসিভ ইনকামের একটি নির্ভরযোগ্য উপায়। চাইলে প্রপার্টি ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির সহায়তায় ঝামেলাবিহীনভাবে আয় করা সম্ভব।
২. রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট (REITs)
বাড়ি না কিনেই রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগের সুযোগ দেয় REITs, যেখানে একাধিক ব্যক্তি সম্মিলিতভাবে বড় প্রজেক্টে অর্থ দেন এবং লাভ ভাগ করে নেন।
৩. অ্যাপার্টমেন্ট সিন্ডিকেশন
বিনিয়োগকারীরা বড় অ্যাপার্টমেন্ট প্রজেক্টে অর্থ প্রদান করেন, যেখানে সবকিছু পরিচালনা করেন জেনারেল পার্টনাররা। বিনিয়োগকারীরা লাভের একটি অংশ পান।
৪. বাড়ি ছোট করে বড় বাড়িটি ভাড়া দেওয়া
অবসরের সময় বড় বাড়ি ছেড়ে ছোট বাড়িতে গিয়ে বড় বাড়িটি ভাড়া দিলে নিয়মিত আয় নিশ্চিত করা যায়।
৫. ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপক নিয়োগ
নিজের ব্যবসায় বিশ্বাসযোগ্য একজন ব্যবস্থাপক রাখলে নিজে সময় না দিয়েও নিয়মিত আয় করা সম্ভব।
৬. পিয়ার-টু-পিয়ার লেন্ডিং
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অন্যদের ঋণ দিয়ে সুদ আকারে আয় করা যায়।
৭. রোবো ইনভেস্টিং
Betterment-এর মতো প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগকারীর ঝুঁকির ধরন ও লক্ষ্য অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে শেয়ার বাছাই ও বিনিয়োগ করা হয়।
৮. উচ্চ ডিভিডেন্ড প্রদানকারী ইনডেক্স ফান্ড
যেমন Vanguard High Dividend Yield Fund-এর মতো তহবিলে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি কম এবং আয় ধারাবাহিক হয়।
৯. বাড়ির অতিরিক্ত রুম ভাড়া দেওয়া
Airbnb বা Vrbo-তে ফাঁকা রুম বা ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে নিয়মিত প্যাসিভ ইনকাম পাওয়া যায়।
১০. বাড়ি বা জায়গা ইভেন্ট স্পেস হিসেবে ভাড়া
বাড়ি বা বাগান ঘন্টা বা দিনের ভিত্তিতে ইভেন্ট ভেন্যু হিসেবে ভাড়া দিয়ে আয় করা সম্ভব।
১১. বাড়ি সিনেমার লোকেশন হিসেবে ভাড়া
ফিল্ম প্রোডাকশনের জন্য Giggster-এর মতো সাইটে বাড়ি বা সম্পত্তি ভাড়া দেওয়া যায়।
১২. গাড়ি ভাড়া
Turo-এর মতো প্ল্যাটফর্মে নিজের অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া দিয়ে মাসিক আয় নিশ্চিত করা যায়।
১৩. গাড়িতে বিজ্ঞাপন বসানো
Wrapify, Carvertise-এর মতো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গাড়িতে বিজ্ঞাপন দিয়ে মাসে ৫০ থেকে ৪৫০ ডলার আয় করা যায়।
১৪. পার্কিং স্পেস ভাড়া
বাসার অতিরিক্ত পার্কিং স্পেস ভাড়া দিয়ে সহজেই কিছু অতিরিক্ত আয় সম্ভব।
১৫. বাড়ির অতিরিক্ত স্টোরেজ স্পেস ভাড়া
অপ্রয়োজনীয় ঘর বা গ্যারেজ অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভাড়া দিয়ে আয় করা যায়।
১৬. লাভজনক ওয়েবসাইট ক্রয়
Flippa, EmpireFlippers-এর মতো সাইট থেকে লাভজনক ওয়েবসাইট কিনে নিয়মিত আয়ের উৎস গড়ে তোলা যায়।
১৭. বই প্রকাশ
Amazon Kindle Direct Publishing-এ নিজের লেখা বই প্রকাশ করে নিয়মিত রয়্যালটি উপার্জন সম্ভব।
১৮. ব্লগিং
একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ব্লগ তৈরি করে গুগল অ্যাডসেন্স বা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আয় করা যায়।
১৯. নৌকা ভাড়া
GetMyBoat-এর মতো প্ল্যাটফর্মে নিজের নৌকা ক্যাপ্টেনসহ ভাড়া দিয়ে আয় করা সম্ভব।
২০. RV (ক্যাম্পার ভ্যান) ভাড়া
RVshare-এ রেজিস্টার করে ক্যাম্পার ভাড়া দিয়ে বছরে ১০,০০০ থেকে ২২,০০০ ডলার আয় করা সম্ভব।
২১. যন্ত্রপাতি ভাড়া
Fat Llama, Loanables-এর মাধ্যমে পাওয়ার টুলস, ওয়াশার, ড্রিল ইত্যাদি ভাড়া দেওয়া যায়।
২২. পোশাক বিক্রি
Poshmark, ThredUp-এর মতো মার্কেটপ্লেসে পুরনো বা ব্র্যান্ডেড পোশাক বিক্রি করে আয় করা সম্ভব।
২৩. পুরনো জিনিস অনলাইনে বিক্রি
eBay, Craigslist, OfferUp-এর মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ঘরের অপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করে এককালীন আয় করা যায়।
২৪. অনলাইন মার্কেটপ্লেস ব্যবহার
যারা থ্রিফট শপিং বা পুরনো জিনিস সংগ্রহে অভ্যস্ত, তারা সেগুলো অনলাইনে বিক্রি করে অতিরিক্ত আয় করতে পারেন।
এইসব উপায়গুলো অবসর জীবনের জন্য আর্থিক সুরক্ষা গঠনে সহায়ক হতে পারে। পছন্দ, দক্ষতা ও সম্পদের ভিত্তিতে উপযুক্ত পদ্ধতি বেছে নিয়ে এখন থেকেই আয় শুরু করা সম্ভব।
মারিয়া