
ছবিঃ সংগৃহীত
প্রায়শই আমরা খবরে শুনি, ৪০-৪৫ বছর বয়সী কোনও ব্যক্তি হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। ঘটনাটি ঘটে এমনভাবে যে পরিবারের লোকজন বুঝতেই পারেননি যে কোনও মারাত্মক ঘটনা ঘটবে। তবে জানেন কি, হার্ট অ্যাটাকের এক মাস আগেও আমাদের শরীরে কিছু লক্ষণ আসতে থাকে? এগুলোকে প্রোড্রোমাল সিমটম বলা হয়। যদি এগুলোকে উপেক্ষা না করা হয়, তবে অনেক অকাল মৃত্যু এড়ানো যেতে পারে।
হার্ট অ্যাটাকের আগের এই লক্ষণগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
হার্ট অ্যাটাকের আগের 7টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ
-
বুকে ব্যথা (Chest Pain)
-
বুকে ভারী ভাব (Heaviness in the Chest)
-
শ্বাসকষ্ট (Shortness of Breath)
-
বুকের ধড়ফড়ানি (Palpitation)
-
বুকে জ্বালা বা পোড়ার মতো অনুভূতি (Burning Sensation in the Chest)
-
অব্যাখ্যায়িত দুর্বলতা (Unexplained Lethargy)
-
ঘুমের সমস্যা (Sleep Disturbances)
এই সাতটি লক্ষণ সকলের ক্ষেত্রে একসঙ্গে দেখা দিতে হবে এমন নয়—কারও ক্ষেত্রে একটি, কারও ক্ষেত্রে একাধিক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যদি আপনি নিজে বা আপনার কাছের কারও মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখেন, তবে অবশ্যই হার্টের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই লক্ষণগুলো?
হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর হার্টের পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা আর পূর্বের মতো কাজ করতে পারে না। কিন্তু হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আগে এগুলোকে চিহ্নিত করে চিকিৎসা করলে হার্ট অ্যাটাক এড়ানো যেতে পারে অথবা তার গুরুতরতা কমানো যেতে পারে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাদের হার্টে আংশিক ব্লক ছিল, তাদের মধ্যে প্রায় 70% হার্ট অ্যাটাকের এক মাস আগে এই লক্ষণগুলো অনুভব করেছিলেন।
হার্টের পরীক্ষা-নিরীক্ষা: কী কী পরীক্ষা করা উচিত?
-
ECG (ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম): এটি হার্টের বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপ পরীক্ষা করে।
-
Echocardiography: হার্টের পেশি এবং ভালভগুলো কেমন কাজ করছে তা পরীক্ষা করে।
-
TMT (Treadmill Test): শারীরিক পরিশ্রমের সময় হার্টের প্রতিক্রিয়া দেখে।
-
Angiogram: হার্টের রক্তবাহের অবরোধ চিহ্নিত করে।
-
CT Coronary Angiogram: নন-ইনভেসিভ পদ্ধতিতে হার্টের রক্তবাহের পরীক্ষা করে।
মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা
গবেষণায় দেখা গেছে যে, মহিলাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের আগে এই লক্ষণগুলো আরও স্পষ্ট হতে পারে। তাই যদি কোনও মহিলা বুকে ব্যথা, বুকে চাপ বা শ্বাসকষ্টের কথা বলেন, তবে সেটিকে মনের ভুল বলে উড়িয়ে দেওয়া উচিত নয়।
এছাড়াও, মহিলাদের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের পর মৃত্যুর হার পুরুষদের তুলনায় বেশি হতে পারে। তাই সময়মতো চিকিৎসা খুবই জরুরি।
কী করবেন হার্ট অ্যাটাকের সন্দেহে?
-
অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন : যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
-
অ্যাসপিরিন খাওয়ান : 325 mg অ্যাসপিরিন খাইয়ে দিন (75 mg চারটি ট্যাবলেট)।
-
পেশেন্টের সাথে থাকুন : তাঁকে একা না রেখে সাথে থাকুন।
-
হাসপাতালে বলুন : যে অ্যাসপিরিন খাওয়ানো হয়েছে সেটি হাসপাতালে জানান।
হার্ট অ্যাটাক মারাত্মক হলেও এর আগে শরীর নানা সংকেত দিয়ে থাকে। এই সংকেতগুলোকে উপেক্ষা না করে সময়মতো চিকিৎসা নিলে অনেক ক্ষতি এড়ানো যায়। তাই আপনি বা আপনার কাছের কেউ এরকম কোনও লক্ষণ অনুভব করলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ইমরান