
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে মঙ্গলবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়
আস্থা ভোট ও অর্থবিল ছাড়া দলের সংসদ সদস্যরা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন বলে ঐকমত্য হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। জনগুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ আসনের ভিত্তিতে বিরোধী দলকে দেওয়ার ব্যাপারেও নীতিগত একমত হয়েছে দলগুলো। সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত ১০০টি আসন রাখার ব্যাপারেও সবাই একমত হলেও এই আসনগুলোর নির্বাচনী পদ্ধতি কী হবে তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবিধান সংশোধনী নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর অনুষ্ঠিত বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয় বলে বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তবে দ্বিতীয় দফা বৈঠকের প্রথম দিন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না। দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘অন প্রটেস্ট (তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ) জামায়াতে ইসলামী মঙ্গলবারের বৈঠক বর্জন করেছে’। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আজ বুধবার ফের বৈঠকে বসবে ঐকমত্য কমিশন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে কমিশনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. মো. আইয়ুর মিয়া, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
বৈঠকের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ আগামী জুলাই মাসে ‘জুলাই সনদ’ তৈরি হতে পারে জানিয়ে বলেছেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংকল্পবদ্ধ যে, জুলাই মাসের মধ্যে জাতীয় সনদ তৈরি করতে পারব। সব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে না। কিন্তু সবাইকেই ছাড় দেওয়ার মনোভাব নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।’
ঈদের আগে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হলেও মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মূল আলোচনা শুরু করে কমিশন। বিএনপি-এনসিপিসহ ২৯টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা হয়। এতে মূল আলোচ্য বিষয় হিসেবে ছিল- সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব, স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া ইত্যাদি। মঙ্গলবারের বৈঠকে যোগ দেয়নি বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী।
ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী তিনদিন টানা আলোচনা চলবে। এরপরও আলোচনা অব্যাহত থাকবে। রাজনৈতিক দলগুলো রাজি থাকলে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবারেও আলোচনা করতে রাজি কমিশন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, জাবেদ রাসিন, এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম প্রমুখ।
আলোচনা ইতিবাচক- আলী রীয়াজ ॥ দ্বিতীয় ধাপের বৈঠক শেষে ব্রিফিংকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের আলোচনা ইতিবাচক এগিয়েছে। ঐকমত্য কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। জামায়াত ইসলামী গতকাল (মঙ্গলবার) সংলাপে অংশগ্রহণ না করলেও আজ বুধবার অংশগ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, সংলাপে জাতীয় সংসদের নারী আসন ১০০ করার বিষয়ে অনেক দল একমত। তবে কী প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে সেটি সিদ্ধান্তের বিষয়। আর প্রধান বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতিগত বিষয়ে সবাই একমত। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ নিয়ে অনেকে একমত। আবার কারও কারও ভিন্নমত রয়েছে। আমরা বলবো সব বিষয়ে সবাই একমত হবে না। আবার একদিনে সবকিছু হয়ে যাবে, সেটাও আশা করা ঠিক নয়। আশা করি, একটা সময় সব কিছু সমাধান হবে।
বৈঠক শেষে নেতারা যা বলেন ॥ বৈঠকের বিরতীর মাঝে ব্রিফিংকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সংসদীয় সংস্কার ও সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত আলোচনায় বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। তিনি বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোর সভাপতির পদ আসনের ভিত্তিতে বিরোধী দল পাবে। এর মধ্যে রয়েছে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটি, প্রিভিলেজ কমিটি, এস্টিমেটস কমিটি এবং পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটি।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ জানান, সংবিধানের ৬৯ অনুচ্ছেদ সংশোধন নিয়ে চলমান আলোচনায় সব দল দুটি বিষয়ে একমত হয়েছে। আস্থা ভোট ও অর্থ বিল। এই দুই বিষয়ে সংসদ সদস্যদের দলীয় অবস্থান অনুসরণ করতে হবে। তবে এসব বাদে অন্যান্য বিষয়ে সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন। বিষয়টি জাতীয় সনদে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে এবং এতে সংশ্লিষ্ট সব দলের স্বাক্ষর থাকবে বলেও তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে একটি অতিরিক্ত লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যেখানে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে ভোট দেওয়ার সুযোগ না রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এই প্রস্তাব এখনও আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। বিএনপি দায়িত্বপ্রাপ্ত হলে এই বিষয়টি সংযুক্ত করার সুযোগ থাকবে। তিনি বলেন, সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আমাদের প্রস্তাবের বাহিরে বহু প্রস্তাবে আমরা একমত হয়ে গেছি।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবাই বলেছে যে রাষ্ট্রপতিকে নির্ধারণ করে দেওয়া হবে, কোন কোন ব্যক্তি প্রধান বিচারপতি হওয়ার যোগ্য। আর দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের বিষয়েও বিএনপি একমত। তবে কিছু দলের এতে আপত্তি আছে।
নারীদের জন্য সংরক্ষিত ১০০টি আসন রাখার ব্যাপারেও সবাই একমত হয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে এই আসনগুলোর নির্বাচনি পদ্ধতি কী হবে তা নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। সংলাপে জামায়াতের না থাকার বিষয়ে প্রশ্নোত্তরে তিনি জানান, ‘এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন মন্তব্য করবে, আমরা না।’
জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে বিএনপির প্রস্তাবের দিকেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঝুঁকে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব। তিনি বলেন, আস্থাভোট ও অর্থবিল ছাড়া দলের সদস্যরা সংসদে দলের বিপক্ষে ভোট দিতে পারবেন বলে বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছে। তিনি বলেন, কোন প্রক্রিয়ায় জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হবে তা কমিশনের কাছে জানতে চেয়েছে এনসিপি।
এনসিপির এই সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যে পদ্ধতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের দল বাছাই করার যে পদ্ধতি, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি। ঈদের আগে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে সরকারপ্রধানের বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছি। সংস্কার কমিশন আগে বলেছিল, কোন পদ্ধতিতে জাতীয় সনদ বা জুলাই সনদ তৈরি হবে, সেটা নিয়ে তারা ছয়টা প্রস্তাব দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটা প্রস্তাব ছিল, সংসদ নির্বাচনের পর সাংবিধানিক সংস্কার করা।’
আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ঈদের আগে (জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে) নির্বাচনের যে তারিখ (এপ্রিলের প্রথমার্ধ) ঘোষণা করেছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি হিসেবে, সেখানে তিনি কমিশনের ছয়টা প্রস্তাবের মধ্যে একটির দিকে হেলে যান, যেটি দিয়েছে বিএনপি। ঐকমত্য কমিশন এখন যে পথে এগোচ্ছে, সেখানে নির্বাচনে কোন কোন বিষয় থাকবে, তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের অবস্থান কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ। বিএনপি যেখানে পরবর্তী সংসদের সংস্কার হবে বলেছে, সেখানে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য কিছুটা হেলে যায়।’
ঐকমত্য কমিশন নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে যেসব রাজনৈতিক দলকে ডাকা হচ্ছে এখানে প্রায় ৩০টি দল। সেখানে কাদের কতটুকু সাংগঠনিক কাঠামো আছে, তাদের নিবন্ধন আছে কিনা, কোন পদ্ধতিতে ঢাকা হচ্ছে, সেসব বিষয় আমরা স্পষ্ট নয়। আমরা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে বলেছি, কাদেরকে এখানে ডাকা হচ্ছে, সেখানে কি কোনো একটি দলের সুপারিশে ডাকা হচ্ছে কি না? আমরা দেখি ঐকমত্য কমিশনে আসা অনেক দলের স্পষ্ট কোনো বক্তব্য থাকে না, শুধু একটি দলের প্রতি তাদের ‘হ্যাঁ-না বলার থাকে। যখনই বিপরীত কোনো বক্তব্য থাকে, তখন হট্টগোল করে।’
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বৈঠকের বিরতীতে সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে জনগণ শঙ্কিত। কারণ, ৫ আগস্টের পরও পরিস্থিতি অনেকটা আগের মতোই রয়েছে। আমাদের মতো লোককে যেখানে জিম্মি হতে হয়, সেখানে নির্বাচন কেমন হতে পারে তা কিছুটা আঁচ করা যায়। তাই আগে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা জরুরি।
পটুয়াখালীতে নিজের নির্বাচনি এলাকায় হামলার বিষয়ে তিনি জানান, দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন। বিগত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অথচ গণঅভ্যুত্থানের পর তাদের মতো নেতাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হতে হয়, যা উদ্বেগের। লন্ডনে বৈঠকে কী হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কিছু বলা হয়নি। এটি সরকারের বিষয়।
তিনি জানান, সংলাপে বেশিরভাগ দল অর্থবিল ও আস্থা ভোট ও সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে বিরোধী দলকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়েও একমত হয়েছে। এছাড়া সংরক্ষিত নারী আসন ১০০ টিতে উন্নীত করার বিষয়েও একমত হয়েছে গণঅধিকার পরিষদ।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, কোনও অজুহাতেই জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করা উচিত নয়। কারণ বিগত দিনে মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। তাই গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় নির্বাচন জরুরি।
সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, সংস্কার ও বিচার করেই এ বছরে নির্বাচন করা সম্ভব। আমরা সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন চাই। তিনি ৭০ অনুচ্ছেদর বিষয়ে অন্যান্য দলের সঙ্গে তার দল ঐকমত্য পোষণ করেছে। আর সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টিকেও তারা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তিনটি বিষয়ে ক্ষোভের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক ও পেশী শক্তি নিয়ে আলোচনা বইয়ে লিপিবদ্ধ করলেও কমিশন তা নিয়ে আলোচনা করেনি। এ বিষয়ে তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান অভিযোগ করে বলেন, নারী আসন বাড়ানো নিয়ে সংস্কার কমিশন চাপাচাপি করছে। অথচ নারীদের জন্য সম্মানজনক হলো তিনশ’ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হয়ে আসা।
তিনি বলেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নারীদের জন্য আসন বাড়ানো যেতে পারে। আগামীতে যেন কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা চালু না হয়, আমরা সে বিষয়ে কথা বলেছি। এ জন্য সংস্কার ও বিচারের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন একমত।
প্রসঙ্গত, কোরবানির ঈদের আগে প্রথম ধাপের আলোচনা শেষে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার জন্য ২ জুন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসেছিল ঐকমত্য কমিশন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত অক্টোবরে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিনের প্রতিবেদন জমা পড়ে ফেব্রুয়ারি মাসে। এসব প্রতিবেদনের সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
তারা সংবিধান সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশন এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত জানতে চায়- যাদের মধ্যে ৩৩টি মতামত জানায়। এরপর ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত তাদের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশনের মাধ্যমে প্রথম পর্বের সংলাপ সম্পন্ন করে ঐকমত্য কমিশন। আলোচনার সুবিধার্থে কয়েকটি দলের সঙ্গে একাধিক দিনও বৈঠক চলে। আলোচনার মধ্য দিয়ে বেশ কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য ও আংশিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে।
বৈঠকে যায়নি জামায়াত ॥ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ডাকে মঙ্গলবারের বৈঠকে বিএনপি-এনসিপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশ নিলেও এতে অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এ ব্যাপারে দলটির নেতারা জানিয়েছেন, ‘অন প্রোটেস্ট তারা মঙ্গলবারের বৈঠকে যাননি। আজ বুধবারের বৈঠকে তারা যোগ দেবেন কিনা, দলের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।’