
বিমান বাংলাদেশের বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার
ভারতে এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার পর সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সম্ভাব্য করণীয় ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নিয়েছে বিমান।
এ বিষয়ে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. সাফিকুর রহমান দৈনিক জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, ভারতে ড্রিমলাইনার দুর্ঘটনার পর বিমানের নিজস্ব ৬টি ড্রিমলাইনার প্লেন অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এতে কোনো ত্রুটি বা অসঙ্গতি ধরা পড়েনি। আগের চেয়ে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণ, যাতে অবহেলাজনিত কিংবা মানবঘটিত ত্রুটির জন্য এ ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা যেন না দেখা দেয়।
মঙ্গলবার বিমানের সদর দপ্তর বলাকায় নিজ কার্যালয়ে বসে ড. সাফিকুর রহমান আরও বলেন, ভারতে দুর্ঘটনার পরপরই আমরা কিছুটা উদ্বিগ্ন ছিলাম। এতে আমরা তাৎক্ষণিক বোয়িং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কি করণীয় সে সম্পর্কে পরামর্শ নিয়ে বিমান হ্যাঙ্গারে গিয়ে সবগুলো ড্রিমলাইনার আমি নিজে তদারকি করি। আমাদের নিজস্ব দক্ষ জনবল দিয়েই প্রয়োজনীয় চেক করাই। আল্লাহর রহমতে সব কিছু ঠিকঠাক পাওয়া গেছে। তারপরও সর্বাত্মক সতর্কতায় রয়েছে বিমান।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজস্ব প্রকৌশলী ও মেকানিকদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে সার্বক্ষণিক রক্ষণাবেক্ষণে রেখে ড্রিমলাইনারগুলো নিরাপদ উড্ডয়নযোগ্য করে রাখা হয়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভারতের গুজরাট রাজ্যের রাজধানী আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত হয় এয়ার ইন্ডিয়া এয়ারলাইন্সের ‘বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। লন্ডনগামী বিমানটি উড্ডয়নের পরপরই একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। এতে ২৪২ আরোহীর মধ্যে একজন ব্রিটিশ ভারতীয় নাগরিক ছাড়া বাকি সবাই নিহত হন। আরোহীদের মধ্যে যাত্রী ছিলেন ২৩০ জন, ১২ জন ছিলেন ক্রু।
এদিকে মঙ্গলবার বিমানের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্প্রতি এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং-৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পতিত হয়, যার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে তদন্ত চলমান। কিন্তু এ বিষয়ে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে প্রকৌশল বিভাগ বিমানের সব বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম-যেমন ইঞ্জিন ফুয়েল সিস্টেম, ইলেকট্রনিক ইঞ্জিন কন্ট্রোল, ইলেকট্রিক্যাল পাওয়ার, হাইড্রোলিক সিস্টেম, এয়ারকন্ডিশনিং, ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেম ইত্যাদির মান যাচাই করার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাসমূহ পরিচালনা এবং ইঞ্জিনের পাওয়ার অ্যাসুরেন্স চেক সম্পন্ন করার কার্যক্রম শুরু করেছে। ওই দুর্ঘটনার তদন্ত শেষে নির্মাতা কোম্পানি বোয়িং কর্তৃক রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত যেসব নির্দেশনা দেওয়া হবে তা সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়নের জন্য বিমানের প্রকৌশল বিভাগ প্রস্তুত রয়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে বর্তমানে মোট ৬টি বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি বোয়িং-৭৮৭-৮ এবং ২টি বোয়িং-৭৮৭-৯ মডেলের উড়োজাহাজ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গন্তব্যে উড্ডয়ন করে। এই উড়োজাহাজগুলোর রক্ষণাবেক্ষণে বিমানের প্রকৌশল বিভাগ এয়ারক্রাফট মেইনটেনেন্স প্রোগ্রাম অনুসরণ করে।
এই প্রোগ্রামে প্রতিটি মেইনটেনেন্স টাস্ক, নির্ধারিত সময়সীমা এবং পদ্ধতি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে। এটি বোয়িং কোম্পানির মেইনটেনেন্স প্ল্যানিং ডকুমেন্ট, টাইপ সার্টিফিকেটহোল্ডার এবং রেগুলেটরি রিকোয়্যারমেন্টের নির্দেশনা অনুসারে তৈরি এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ কর্তৃক অনুমোদিত
বিমান জানায়, উল্লিখিত নির্ধারিত রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমগুলো নির্ধারিত সময় পরপর এক বা একাধিক টাইপ রেটেড প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে বোয়িং কর্তৃক নির্ধারিত মেইনটেনেন্স ম্যানুয়াল অনুসরণ করে সম্পন্ন করা হয়। প্রতিটি টাস্ক সম্পন্ন হলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী টাস্ক কার্ডে স্বাক্ষর করেন এবং তা পরবর্তীতে কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স কর্তৃক যাচাই করার পর মেইনটেনেন্স প্ল্যানিং শাখায় সংরক্ষণ করা হয়।
এছাড়াও এয়ারক্রাফট হেলথ ম্যানেজমেন্ট এবং ইঞ্জিন হেলথ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে মেইন্টেনেন্স কন্ট্রোল সেন্টার এবং কেন্দ্রীয় প্রকৌশল শাখা প্রতিটি উড়োজাহাজের স্ট্যাটাস সার্বক্ষণিক রিয়েল টাইম মনিটর করে। ফলে যে কোনো সমস্যা দেখা দেওয়ার আগেই সতর্কতামূলক অ্যালার্ট পাওয়া যায় এবং সে অনুযায়ী প্রতিরোধমূলক রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সর্বদা যাত্রী নিরাপত্তা ও মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের প্রতিটি ধাপ আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী সম্পন্ন করে থাকে।