
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
ভয় ও পক্ষপাতহীনভাবে জুলাই-আগস্টের গণ-আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আল্লাহর ওপর নির্ভর করে পথ চলি। তার ওপর নির্ভর করে কাজ করি। কেউ বোমা মারলেও ভয় পাব না। মঙ্গলবার অ্যাটর্নি জেনারেল ও চিফ প্রসিকিউটরের এজলাস কক্ষে দেওয়া সংবর্ধনায় তিনি একথা বলেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কেউ গুলি করে মেরে ফেললে আমার সব গুনাহ নিয়ে যাবে। ফলে আমার ভয়ের কারণ নেই। আমি কবরের পাশে দাঁড়ানো, আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ভয়ের কিছু নেই, আমরা এই তরী বয়ে নিয়ে যাব। তিনি আরও বলেন, ‘শত শত ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে মানুষকে স্বাধীনভাবে কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে গেছেন। অনেকে আহত হয়েছেন। আহতদের অনেকে এখনো যথাযথ চিকিৎসা পায়নি। আমরা বিচারকরা চেষ্টা করছি তাদের দুর্ভোগ কমাতে।’
সংবর্ধনার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সব রকম অন্যায়-অত্যাচার, অবিচারের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচারের যেমন প্রত্যাশা, একই সঙ্গে এই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কোনো প্রশ্নবোধক চিহ্ন যাতে না থাকে, আন্তর্জাতিক মানদ-ে যাতে ন্যায়বিচারটা করা হয় সেটাও নিশ্চিত করা। এটাই ট্রাইব্যুনালের কাছে আমাদের প্রত্যাশা।’
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আজকে সংবর্ধনায় এজলাসে বসা শুরুর মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনাল-২ এর যাত্রা শুরু হলো। ট্রাইব্যুনাল- ১ থেকে কিছু মামলা এখানে আসবে বলে আশা করছি। আর কিছু নতুন মামলা এখানে দাখিল করব। ইনশাআল্লাহ, বিচারের অগ্রগতি দেশবাসী দেখতে পাবে। এক প্রশ্নে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘গুমের আতঙ্ক থেকে জাতিকে যদি উদ্ধার করতে হয়, তাহলে পেছনে ঘটে যাওয়া সব অপরাধের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
সেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্যই ট্রাইব্যুনালগুলোকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই ট্রাইব্যুনালগুলো যাতে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে বিচারপ্রক্রিয়াটা শেষ করতে পারেন, সেই প্রত্যাশা আমরা ব্যক্ত করেছি।’
গত ৮ মে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করে সরকার। এই ট্রাইব্যুনালের সদস্য পদে নিয়োগ পান অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং মাদারীপুরের জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান ও সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকের প্রাপ্য বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পাবেন।
এ ছাড়া প্রজ্ঞাপনে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে শত শত অভিযোগ জমা পড়ে। জাজ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।