ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

যে কারণে ইরানের পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করার সক্ষমতা নেই ইসরায়েলের

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ১৭ জুন ২০২৫

যে কারণে ইরানের পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস করার সক্ষমতা নেই ইসরায়েলের

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের সাম্প্রতিক নজিরবিহীন হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ধ্বংস করা। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাকে নিশানা করে চালানো এই হামলায় অন্তত দুটি স্থাপনায় আংশিক ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের গোপন ও শক্তিশালী স্থাপনাগুলো ধ্বংস করার সক্ষমতা ইসরায়েলের নেই।

 

 

ইরানের সবচেয়ে গোপন ও সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনাটি হলো ফোরদো, যা একটি পর্বতের গভীরে নির্মিত। এই কেন্দ্রে রয়েছে এমন প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা একে বাইরের যেকোনো হামলা থেকে প্রায় অপ্রতিরোধ্য করে তোলে। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের স্থাপনা ধ্বংসে যে বিশেষ ধরণের ভারী বোমার প্রয়োজন, তা শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছে রয়েছে।

 

 

যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ৩০০-পাউন্ড ওজনের একটি বিশেষ বোমা, যা শক্ত পাথর ও কংক্রিট ভেদ করে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম, সেটিই একমাত্র এই কেন্দ্র ধ্বংস করতে পারে। তবে ইসরায়েলের কাছে এই বোমা নেই এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও এই বোমা তাদের সরবরাহ করতে রাজি নয়।

সাবেক মার্কিন জেনারেল জোসেফ ভটেল বলেন, “আমরা চাই না ইসরায়েল এই বোমা ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি বড় যুদ্ধের সূচনা করুক।”

 

 

এই সীমাবদ্ধতার কারণে ইসরায়েল বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনাকে সরাসরি ধ্বংস না করে এর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং সংযোগ অবকাঠামোতে হামলা চালিয়ে কার্যক্রম আংশিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার চিন্তা করছে নেতানিয়াহু সরকার।

এর আগে ১৯৮১ সালে ইরাকের ওসিরাক পারমাণবিক কেন্দ্র বোমা মেরে ধ্বংস করেছিল ইসরায়েল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইরান ফোরদোর মতো স্থাপনাগুলো পাহাড়ের গভীরে নির্মাণ করেছে যাতে বাইরের কোনো বিমান হামলায় তা ধ্বংস না হয়।

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, ফোরদো কেন্দ্রে বর্তমানে ৮৩.৭% বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম রয়েছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশ মাত্রার খুব কাছাকাছি। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, ফোরদোর ওপর বড় ধরনের সামরিক হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল হতে পারে এবং এর ফলে পারমাণবিক বিকিরণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

 

এখনো পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলকে ওই বিশেষ বোমা সরবরাহে সম্মতি দেননি। তার দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট, তিনি নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধ চান না। তাছাড়া, তার অনেক সমর্থকও যুদ্ধবিরোধী অবস্থানে রয়েছে।

ফোরদো এখন কেবল একটি প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ নয়, বরং এটি একটি জটিল কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। একে ধ্বংস করতে শুধু বোমা নয়, প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহমত ও কৌশলী রাজনীতির, যা এখন নেতানিয়াহু সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক।
 

ছামিয়া

×