
ছবি: জনকন্ঠ
সাধারণ নিয়মে টাকার বিনিময়ে পণ্য বিক্রি হলেও মানিকগঞ্জে বাসস্ট্যান্ডে ওভার ব্রিজের নিচে জেলার বিভিন্ন এলাকায় হাটের বৈশিষ্ট্য হলো, মানুষ নিজেই পণ্য। নির্ধারিত একটি সময়ের জন্য একজন আরেকজনের কাছে বিক্রি হয়ে যান। মানিকগঞ্জে এই মানুষ বিক্রির হাট এখন জমজমাট।
প্রতিদিন সকালে হাট শুর হয়। ৭টার মধ্যে এই শ্রমজীবী মানুষদের ক্রয় করে নিয়ে যায়। বতর্মানে ধান কাটার মৌসুমে মাঠে পাকা ধান কাটা শুর হয়েছে। কর্মজীবী দিনমুজরদের প্রয়োজন কাজ। এ কারণে কৃষকদের কাছে শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে অনেক। তাছাড়াও অন্যান্য কাজেও শ্রমিকদের চাহিদা রয়েছে। তাই শ্রমিকের দামও থাকে বেশ চড়া। প্রতিটি শ্রমিকের মূল্য ৬০০ থেকে সাড়ে ৭ শত টাকার। এ হাটে ১৫ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সে কৃষিশ্রমিক দেখা যায় বেশি। সরেজমিনে হাটে গিয়ে দেখা যায়, কারো হাতে বাঁশের তৈরি বাইং, কারো হাতে ব্যাগ। ব্যাগে হালকা কাপড়-চোপর আর কাঁচি। কেউ বসে আছে, কেউ দাঁড়িয়ে।
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা এক শ্রমিক বলেন ১০ জনের একটি দল হাটে আসেন। এ সময় তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, সংসারে বোনসহ স্ত্রী ও ছেলে মেয়ে রয়েছে। তাদের ভরণপোষণের জন্য তাকে কর্মের পথ বেছে নিতে হয়েছে।
কিশোর মামুন জানায়, "আমার বাড়িতে মা রয়েছে। তাকে ভরণপোষণ ও চিকিৎসার জন্য এই কর্মের পথ বেচে নিতে হয়েছে। ছোট বলে কেউ আমাকে কিনতে চায় না। তাই অল্পদামে বিক্রি হতে হয় আমাকে।"
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা এক শ্রমিক বলেন, "আমাদের এলাকায় এখন কোনো কাজ নাই। বসে থেকে কি করব? তাই এখানে বোরো ধান ও মাটি কাটার জন্য এসেছি। কিছু টাকা জমিয়ে চলে যাব।"
সিরাজগঞ্জ থেকে আসা এক শ্রমিক বলেন, "আমার ৮ বিঘা জমি ছিল।বেশ কয়েক বছর আগে রাক্ষসী যমুনা নদী তা কেড়ে নিয়েছে। পরিবারের লোকজন নিয়ে এখন অন্যের জায়গায় থাকি। এজন্য নিজেকে ভাড়া দিতে হয়।"
৬০ বয়সের বৃদ্ধ দিলওয়ার জানায়, "ছেলেরা যার যার মতো সংসার পেতে নিয়েছে। ওদের বাবা-মার ভরণপোষণের সময় তাদের নেই। তাই বৃদ্ধ বয়সে বাড়ি থেকে বের হয়ে বিক্রির জন্য মানিকগঞ্জের হাটে এসেছি।"
নাটোর থেকে আসা এক শ্রমিক বলেন, "অনেকেই বিক্রি হওয়ার আশায় রোদ, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড ওভার ব্রিজের নিচে হাটে দাঁড়িয়ে ও বসে থাকে। বিক্রি না হতে পারলে রাতে ল কলেজের বারান্দায় বা ওভার ব্রিজের উপরে রাতে থাকে।"
তাছাড়াও পাবনা কাজির হাট থেকেও শ্রমিক আসেন এখানে। বিভিন্ন এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, এখন একজন শ্রমিকের দাম ৭ শত থেকে সাড়ে ৭ শত টাকা। তাতে তিনবেলা খাবারসহ এক কামলার দাম পড়ে কমপক্ষে ৮৫০ টাকা। আর এখন বাজারে এক মণ ধানের দামও ১৬শত থেকে ১৭শ টাকা মন।
গৃহস্থ তোতা মিয়া জানান, "কামলার দাম গত বছরের চেয়ে এবার বেশি। তবুও কিছু করার নেই। তাই বেশি দাম দিয়েই কামলা কিনতে হয়েছে।"
বালিরটেক গ্রামের কৃষক হালিম বলেন, "আমি মানিকগঞ্জ থেকে সাড়ে ৬০০শত টাকা দরে পাঁচজন কামলা (শ্রমিক) কিনেছি। কামলাদের কাজের মান ভালো। কাজে কোনো ফাঁকি দেয় না। তাদের তিনবেলা খাবার দিতে হয়। আর কাজ করে ভোর থেকে একটানা সন্ধ্যা পর্যন্ত।"
Mily