
ছবি: সংগৃহীত
তেহরানে ইসরায়েলের মিসাইল হামলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইরান ব্রডকাস্টিং (আইআরআইবি)-এর প্রধান কার্যালয়। হামলার সময় সরাসরি সম্প্রচার চললেও স্বল্প সময়ের মধ্যে পুনরায় চালু হয় সম্প্রচার কার্যক্রম।
হামলার সময়কার দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় এক দৃশ্য, যেখানে দেখা যায়, বোমা বিস্ফোরণের মাঝেও অত্যন্ত শান্ত এবং অবিচল ভঙ্গিতে সংবাদ পাঠ করছেন উপস্থাপিকা *সাহারা ইমাম*। তার সাহসিকতা ও পেশাদারিত্ব বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছে।
সোমবার, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি সংঘাতের প্রেক্ষাপটে, তেহরানে অবস্থিত আইআরআইবির ভবনে হামলা চালায় ইসরায়েল। একাধিকবার বেজে ওঠে সতর্কতামূলক সাইরেন। এরপরই মিসাইল আঘাত হানে ভবনের একটি অংশে। তখন টেলিভিশনের স্টুডিও থেকে সরাসরি সংবাদ সম্প্রচার চলছিল।
হামলার সময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও উপস্থাপিকা সাহারা ইমাম দৃঢ় কণ্ঠে খবর পাঠ করে যান। বিস্ফোরণের পরেও কোনো ধরণের অস্থিরতা প্রকাশ না করে, শান্তভাবে চেয়ার থেকে উঠে স্টুডিও ত্যাগ করেন তিনি। বিস্ফোরণে ধসে পড়া ভবনের অংশ কিংবা উড়ে আসা ধ্বংসাবশেষও তার মনোবল ভাঙতে পারেনি।
সংবাদ পাঠকালে সাহারা বলেন,“এই যে শব্দ শুনছেন, এটি আমাদের মাতৃভূমির ওপর আগ্রাসনের শব্দ। সত্য ও ন্যায়বিচারকে দমিয়ে রাখার শব্দ। আপনারা যা দেখছেন, শুনছেন, তার কারণ—এই মুহূর্তে স্টুডিওতে আছড়ে পড়া বোমা।”
হামলার পর খুব দ্রুত আইআরআইবির সম্প্রচার আবার শুরু হয় এবং সাহারা ইমাম আবারও পর্দায় ফিরে আসেন। কয়েক মুহূর্ত আগেই যারা বিস্ফোরণের শব্দে চমকে উঠেছিল, তারা বিস্মিত হয় সাহারার স্বাভাবিক ও অবিচল উপস্থিতি দেখে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মুহূর্তের ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সাহারা ইমাম রাতারাতি সাহসী ও প্রতীকী প্রতিবাদের মুখ হয়ে ওঠেন। অনেকে তাকে “*সত্যের কণ্ঠস্বর” এবং “ইরানি প্রতিরোধের প্রতীক*” হিসেবে আখ্যা দেন।
ইরান সরকার জানায়, এই হামলা কেবল ভবন ধ্বংসের উদ্দেশ্যে নয়, বরং সত্য প্রচারকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছে। ইরানি কর্তৃপক্ষ এটিকে "যুদ্ধ অপরাধ" হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
এক বিবৃতিতে বলা হয়,
“হামলাটি ভবনকে লক্ষ্য করে নয়, লক্ষ্য করা হয়েছে আমাদের কণ্ঠস্বরকে। ইসরায়েল গত কয়েকদিনে নারী, শিশু ও নিরীহ মানুষদের নির্বিচারে হত্যা করছে, এই সত্য প্রচার থামাতেই এই বর্বরতা চালানো হয়েছে। তবে আমাদের থামানো এত সহজ নয়।”
এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও মানবাধিকার সংস্থা। অনেকেই একে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গণমাধ্যম স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
ছামিয়া