ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

ইরান-ইসরাইল উত্তেজনায় ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধ, মজুদ টিকবে কতদিন?

প্রকাশিত: ১২:৫৯, ১৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:০৬, ১৮ জুন ২০২৫

ইরান-ইসরাইল উত্তেজনায় ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধ, মজুদ টিকবে কতদিন?

ছবি: সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্যে টানটান উত্তেজনার মধ্যে ইসরাইল ও ইরান সরাসরি সংঘাতে জড়িয়েছে। গত শুক্রবার ভোরে ইসরাইল আকস্মিকভাবে ইরানে হামলা চালালে পুরো অঞ্চলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান ছুড়েছে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর তথ্য মতে, শুক্রবার থেকে ইরান ইতোমধ্যে ৩৭০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠেছে—ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র মজুদ কতটা শক্তিশালী? এবং এই হারে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া চলতে থাকলে তারা কতদিন টিকে থাকতে পারবে?

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার দাবি, সংঘাত শুরুর আগে ইরানের হাতে প্রায় ৩,০০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছিল। এর মধ্যে রয়েছে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘপাল্লার মিসাইল, এমনকি হাইপারসনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন অস্ত্রও।

আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা ISNA বলছে, ইরানের হাতে অন্তত ৯ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যা সরাসরি ইসরাইলে আঘাত হানতে সক্ষম। এর মধ্যে রয়েছে “ইমাদ”, “গাদার-১” এবং “ফাত্তাহ-১” হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র।

ইসরাইলি আঘাতে ধ্বংস ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি

ইসরাইলি গোয়েন্দা সূত্র বলছে, সংঘাত শুরুর পর থেকে ইরান তাদের এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ কেন্দ্র হারিয়েছে। এতে করে ইরানের মজুদ কমে এখন আনুমানিক ২,০০০-এ নেমে এসেছে।

ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের হার ও মজুদের আয়ুষ্কাল

পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, ইরান প্রতিদিন গড়ে ৫০–১৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ছে। দিনে যদি ১০০টি করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে, তাহলে মজুদ শেষ হতে সময় লাগবে মাত্র ২০ দিন। আবার সপ্তাহে ১০০টি হলে তা টিকবে ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত।

ইরান যদিও নিজস্ব প্রযুক্তিতে ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন করতে সক্ষম, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বছরে সর্বোচ্চ ৫০০–১০০০টি তৈরি করা সম্ভব। সরাসরি যুদ্ধে এই উৎপাদন গতি যথেষ্ট নয়।

স্মার্ট কৌশল নেবে ইরান?

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান যদি স্মার্ট স্ট্র্যাটেজি নেয় এবং প্রতিবার সর্বশক্তি প্রয়োগ না করে সীমিত হারে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, তাহলে এই মজুদ ছয় মাস বা তারও বেশি সময় টিকে যেতে পারে। তবে এতে প্রতিক্রিয়া প্রদানের ক্ষমতা কমে যাবে এবং তেহরানের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ বাড়বে।

আইআরজিসির ব্যাখ্যা ও ইসরাইলের দুর্বলতা

নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া তথ্যে, ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (IRGC) জানায়, তারা প্রথমে এক হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পরিকল্পনা করেছিল, কিন্তু ইসরাইলের আগাম হামলায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।

এখন ইরান তুলনামূলকভাবে কম ব্যয়বহুল “শাহেদ ড্রোন”-এর মতো অস্ত্রে জোর দিচ্ছে।

ইসরাইলের অস্ত্র নির্ভরতা

অন্যদিকে ইসরাইলের অস্ত্র সরাসরি নিজেদের উৎপাদনের উপর নয়—তারা নির্ভর করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সরবরাহের উপর। এবং ইরানের তুলনায় এই অস্ত্রগুলো অনেক বেশি ব্যয়বহুল। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরাইলের এটি একটি কৌশলগত দুর্বলতা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

চলমান ইরান-ইসরাইল সংঘাত কেবল দুই দেশের সীমাবদ্ধ যুদ্ধ নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের ভৌগোলিক ও কূটনৈতিক ভারসাম্যের জন্য এক বিশাল হুমকি। ক্ষেপণাস্ত্র মজুদের সংখ্যা এবং যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে, উভয় পক্ষই বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

সূত্র: https://youtu.be/dzLFPvFqDgc?si=tA8JLNwss5-NLjpJ

আঁখি

×