
ছবি: জনকণ্ঠ
নিজে চোখে দেখতে পান না। অথচ মুমূর্ষু রোগী নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় পড়েন। এতে রাষ্ট্রীয় সম্পদেরও ক্ষতি হয়। এ ধরনের ঘটনায় তাকে ১৩ বার শোকজ ও কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। তবুও মেডিকেল বোর্ড কর্তৃক অযোগ্য ঘোষিত এই ড্রাইভার এখনো সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। এতে স্বাস্থ্য বিভাগের ভেতরে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। উঠেছে প্রশ্ন— ড্রাইভার বকুল মিয়ার এত ক্ষমতার উৎস কোথায়? কেন তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হচ্ছে না?
বকুল মিয়া দীর্ঘদিন ধরে ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ ও শৈলকুপার বিভিন্ন হাসপাতালে ড্রাইভার পদে চাকরি করছেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময় তার জায়গায় অ্যাম্বুলেন্স চালান তার দুই ছেলে মিল্টন ও মিলন। এই বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের নজরে এলেও দীর্ঘদিন ধরে কোনও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং প্রতিবারই তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তবুও তার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো এখনো দাপটের সঙ্গে সরকারি চাকরিতে বহাল রয়েছেন তিনি।
২০২০ সালের ১ জানুয়ারি শৈলকুপা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাশেদ আল মামুন একটি চিঠিতে অভিযোগ করেন যে, বকুল মিয়া নিজে গাড়ি না চালিয়ে বহিরাগতদের দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স চালাচ্ছেন। ২০২১ সালে এমনই এক ঘটনায় শৈলকুপা হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সটি কিছু লোকজন নিয়ে কুষ্টিয়ায় গিয়ে আটকা পড়ে। পরে জানা যায়, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন বকুল মিয়ার ছেলে মিল্টন। ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পুলিশ গাড়িটি উদ্ধার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে।
২০২৪ সালে কালীগঞ্জ হাসপাতালে বদলি হওয়ার পরেও বকুল মিয়া কর্তৃপক্ষের ছুটি ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতেন। ৫ মার্চ তাকে শোকজ করা হলেও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। ২০ এপ্রিল তাকে যশোরে গাড়ি মেরামতে পাঠানো হলে তিনি সেখানে না গিয়ে ঝিনাইদহে রাত কাটিয়ে ফেরেন। জবাব চাওয়ায় তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। পরবর্তীতে একাধিক স্মারকে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হলেও তিনি চরম ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেন। এরপর তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে বদলি করা হয়।
সদর হাসপাতালে যোগদানের পরও তিনি নিজে গাড়ি চালানো বন্ধ রাখেন। বরং বহিরাগতদের দিয়ে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালানো অব্যাহত রাখেন। বিষয়টি জানার পর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম খুলনা বিভাগের পরিচালককে অবহিত করে চিঠি পাঠান। তারপরও তার আচরণে কোনও পরিবর্তন হয়নি।
সবশেষ ২০২৪ সালের ১৫ আগস্ট কালীগঞ্জ উপজেলার দুলাল মুন্দিয়া এলাকায় একটি অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় পড়ে। তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে বকুল মিয়াকে অযোগ্য ঘোষণা করে ৩১ আগস্ট প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্ত কমিটিতে ছিলেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. গুলশান আরা লিমা, ইনডোর মেডিকেল অফিসার ডা. মো. নাঈম সিদ্দিকী ও মেডিকেল অফিসার ডা. রাজীব চক্রবর্তী।
বকুল মিয়া অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি অসুস্থ থাকায় মাঝে মাঝে তার ছেলে অ্যাম্বুলেন্স চালান। সিভিল সার্জন ডা. কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে শৈলকুপায় বদলি করা হয়েছে। তবে তিনি যদি আবারও নিজে গাড়ি না চালান, তাহলে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে বদলি আদেশের পর বকুল মিয়া ঢাকায় বদলি বাতিলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে তার স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তিকে হুমকি-ধমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এম.কে.